ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলা কড়ইতলি গ্রামের কোচপাড়া অংশে সুনিবিড় পরিবেশে সৌদি খেজুর চাষ করে নজর কেড়েছেন চাষি মাজহারুল ইসলাম। শুধু সৌদিয়ান খেজুর নয়, কমলা ও মাল্টার পাশাপাশি ৩ একর জমির উপর নিজ উদ্যোগ বিভিন্ন প্রজাতির আম, ড্রাগন, এলাচি, সবেদা, তেতুল, আপেল, আঙ্গুর, আমলকি, আমড়াসহ পেয়ারা চাষ করেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, কৃষক মাজহারুল ইসলাম ২০১২ সালে হাতে নিয়েছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী এই ফলজ বাগানের কাজ। ক্রমান্বয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মাল্টা চাষে জাতীয় ফলদ মেলায় সেরা মাল্টা চাষী নির্বাচিত হয়েছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেনসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন ব্যতিক্রমধর্মী এই ফলজ বাগান।
পাহাড়ি ক্ষারীয় লালচে মাটিতে ফলজ বাগানে সফলতা জানার জন্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা ও গবেষণা করছেন। একদিকে খেজুরের চাষ অন্যদিকে লিচু গাছে বিভিন্ন জাতের মাল্টা, দেশি মাল্টা গাছে ১৬ জাতের কমলা ও উন্নত জাতের মাল্টা উৎপাদন করে হতবাক করেছেন। ফলন ধরেছে হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়াসহ মোট ৬ জাতের আম। দেশি জাম্বুরা গাছে উন্নত জাতের জাম্বুরা, একই গাছে কয়েক প্রজাতির কূল উৎপাদন এখন মাজহারুলের নতুন স্বপ্ন।
কৃষক মাজহারুলের কাছে সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃক্ষ রোপণের বিষয়ে একাডেমিক কোন দক্ষতা অর্জন করেননি তিনি। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই গড়ে তুলেছেন এই ফলজ বাগান। জন্মস্থান ফরিদপুরে এই ব্যতিক্রমধর্মী সৌদিয়ান জাতের খেজুরের চাষ শুরু করেছিলেন কিন্তু নিম্নাঞ্চল হওয়ায় সেখানে সফল হতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে পুনরায় বেছে নেন মামার বাড়ি হালুয়াঘাটের গারো পাহাড়ের এই উঁচু মাটি। যেখানে সফলতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছেন বলে জানান এই কৃষক।
প্রবাস জীবন সৌদি আরবের অভিজ্ঞতায় খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন তিনি। তারপর সেই বীজ থেকে তার নিজ দক্ষতায় চারা উৎপাদন করেন। এখন তার শতাধিক গাছ সহনশীল অবস্থায় এসেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাছে খেজুর ধরতেও শুরু করেছে। শুধু খেজুর নয়,মাল্টা ও কমলা চাষেও সফল হবেন তিনি এমনটিই জানিয়েছেন। জাম্বুরা গাছের উপর কমলার কলম করে উন্নত জাতের কমলার উৎপাদন করার চেষ্টা অব্যাহত আছে তিনি। ইতিমধ্যে কয়েকশত জাম্বুরার চারা পাহাড়ের উপরিভাগে রোপণ করেছেন পরে সেই গাছ থেকে কলম পদ্ধতির মাধ্যমে কমলা ও মাল্টা উৎপাদন করবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে চাষি মাজহারুলের বাগান পরিদর্শন করা হয়েছে। খেজুরসহ বাকি জাতগুলো চাষি তার নিজস্ব উদ্যোগেই গ্রহণ করেছেন। মাল্টা ও কমলার চারা সরকারিভাবে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। এই ফলজ বাগানকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে থাকবে বলে তিনি জানান।