গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মাত্র ১১টি নতুন কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড পুঁজিবাজারে এসেছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে আসা এই ১১টির মধ্যে নয়টি কোম্পানি ও ২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। একই সময়ে সাতটি কোম্পানি ও ২টি মিউচুয়াল ফান্ড সেকেন্ডারি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। আগের বছর পুঁজিবাজারে আইপিওতে আসা কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ছিল নয়টি। সে হিসেবে পুঁজিবাজারে আসা নতুন কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারকে ভালো করতে সবচেয়ে বেশি দরকার ব্যাংক, বীমা, সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে, যা বাজারকে চাঙ্গা রাখবে। কিন্তু প্রতিবছর যেহারে নতুন কোম্পানি আসছে তা মোটেই আমাদের দেশের মতো বড় অর্থনীতির তুলনায় যথেষ্ট ও সন্তোষজনক নয়। এছাড়া যে কয়টি কোম্পানি বাজারে আসছে তার মধ্যেও কিছু কিছু কোম্পানির সমস্যা দেখা যায়। সুতরাং বিকাশমান অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারকে তাল মেলাতে হলে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। এমনকি সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা পুঁজিবাজারে আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও আসছে না। শীঘ্রই তাদের বাজারে নিয়ে আসতে হবে।
ডিএসইর তথ্য অনুসারে, শিল্প উদ্যোক্তারা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজার থেকে ২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ১১টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মোট ৫৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৭৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূলধন উত্তোলন করে। অপরদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে মোট ৩৯০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছিল।
কোম্পানিগুলো হলো- আমরা নেটওয়ার্কস লি. ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড লিমিটেড, নাহি এ্যালোমুনিয়াম কমপোজিট প্যানেল, কুইন সাইথ টেক্সটাইল মিলস্ লি., অ্যাডভেন্ট ফার্মা লি., ইন্ট্রাকো রিফ্যুয়েলিং স্টেশন লি., বসুন্ধরা পেপার মিলস, এসকে ট্রিমস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লি., এবং আমান কটন ফিব্রয়াস লি.। এছাড়া আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ব অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। এসব কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্য থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের (জুন পর্যন্ত) বসুন্ধরা পেপার, আমান কটন ও এসকে ট্রিমস এই তিনটি ছাড়া বাকি ছয়টি কোম্পানি ও ২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৬৭৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে সেকেন্ডারি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়া অপর কোম্পানিটি হলো বিবিএস ক্যাবল লি.। এছাড়া জুলাই মাসের শুরুতে আরও আইপিওতে আসাত আমান কটন ছাড়া বাকি দুইটি কোম্পানিরও লেনদেন শুরু হয়েছে সেকেন্ডারি বাজারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও মোট ৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হয়েছিল। যাদের মোট পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভীর মতে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারের খুঁটি হিসেবে কাজ করে। তাই তিনি ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে জোর দেন। তিনি বলেন, ভালো কোম্পানি আনতে পারলে পুঁজিবাজারের শক্তি অনেক বেড়ে যাবে। তাহলে কোনো অবস্থাতেই বাজারে বড় ধরনের পতন হবে না। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থীতিশীল করার বেশ কয়েকটি কাজের মধ্যে একটি হলো বেশি করে ভালো এবং বড় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা। দেশের মধ্যে অনেক বড় বড় কোম্পানি তৈরি হয়েছে। আরও কিছু কোম্পানি তৈরি হচ্ছে। অনেক বড় বড় কোম্পানি তাদের উত্পাদিত পণ্য রপ্তানিও করছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে আসছে না তারা। ওই কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে।
২০১২ সালে দুই দফায় ৯টি ব্যাংককে ব্যবসার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রধান শর্ত ছিল ব্যবসা শুরুর ৩ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। কিন্তু কার্যক্রম শুরুর ছয় বছরেও তারা পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি। এই অবস্থা ১৬টি বীমা কোম্পানির। এসব কোম্পনিকে একই বছর দেশের বীমা খাতে ব্যবসা করার জন্য অনুমোদন দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বীমা আইন অনুসারে, নিবন্ধিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের আইপিওতে আসতে হয়। এরপর যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরও ৬ মাস বাড়াতে পারে। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছে।