পাইলস হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

মলদ্বারে সামান্য পাইলস, ফিসার ও ফিস্টুলা থেকে শুরু করে ক্যানসারও হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। মলদ্বারে যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে মনে করি পাইলস হয়েছে।

লক্ষণ : তাজা রক্ত, ফিনকি দিয়ে রক্ত যাওয়া, সাধারণত কোনো ব্যথা থাকে না, মাংসপি- ঝুলে পড়া, ভেতর-বাহির হওয়া, মাঝে মধ্যে ফুলে গিয়ে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। আরও এক ধরনের পাইলস আছে, যাতে চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে ওঠে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এতে কোনো রক্তপাত হয় না।
যে কারণে পাইলস হয় : অনেকগুলো কারণে পাইলস হতে পারে। যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, চাপ দিয়ে মলত্যাগ করা, ঘনঘন মলত্যাগ (আইবিএস), অনেক সময় বংশগত, দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করলে, সন্তান ধারণের সময়ও অনেকের পাইলস হয়।

নিয়ন্ত্রণের উপায় : কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এ জন্য বেশি বেশি শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে। দৈনিক অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে। মাংস (খাসি, গরু) কম খেতে হবে। ইসুবগুলের ভুসি রাতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে। এর পরও কোষ্ঠবদ্ধতা থাকলে ওষুধের মাধ্যমে মল নরম রাখতে হবে।

পাইলসের চিকিৎসা পদ্ধতি : ওষুধের সাহায্যে পাইলসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে পাইলস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই প্রাথমিক অবস্থায় পাইলসের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিনা অপারেশনের মাধ্যমে ব্যথামুক্তভাবে পাইলসের চিকিৎসা করা সম্ভব। যেমন- বেন্ডিং, ইনজেকশন (স্কেলেরথেরাপি), ইনফ্রারেড কোয়াগুলেশন ইত্যাদি। লংগো পদ্ধতির মাধ্যমেও পাইলসের চিকিৎসা করা যায়। এ পদ্ধতিতে বিশেষ এক ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে মলদ্বারের বাইরে কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। এতে খুব সামান্য ব্যথা হয়। ২/৩ দিনের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং এতে কোনো ধরনের শেক বা হিপবাথ লাগে না। এ পদ্ধতিতে খরচ একটু বেশি হয়।

লেজারের মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা : এ পদ্ধতিতে লেজারের মাধ্যমে পাইলস কেটে চিকিৎসা করা হয়, যা সাধারণভাবে কেটে পাইলসের চিকিৎসা করার মতো। তবে কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, এতে ব্যথা কম হয়। শেক বা হিপবাথ নিতে হয়।

কেটে পাইলসের চিকিৎসা : এ পদ্ধতিতে রোগীকে অচেতন (আংশিক) করে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অপারেশনের পর ৩-৪ সপ্তাহ লাগে শুকাতে। এ সময় রোগীকে হালকা গরম পানিতে লবণ বা ওষুধ মিশিয়ে হিপবাথ নিতে হয়। ৩-৪ সপ্তাহ ধরে হালকা রক্তের মতো তরল ক্ষতস্থান থেকে বের হয়। এতে ৪-৫ দিন বেশ ব্যথা অনুভূত হয়। তাই ব্যথার ওষুধ সেবন করতে হয়। তাই ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। পাইলস অতি সাধারণ রোগ। অনেকের ধারণা, পাইলস ভালো হয় না এবং এটির কোনো চিকিৎসা নেই। এমন ধারণা ঠিক নয়। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পাইলসের সফল চিকিৎসা সম্ভব এবং পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

লেখক : অধ্যাপক, হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট

সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

চেম্বার : লিভার গ্যাস্ট্রিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল, বাড়ি-৭৫, রোড

৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা

০১৮৭৯১৪৩০৫৭, ৯১৩৩৬১৯