সুইট কর্ন না গরম গরম ভট্টা, কোনটা বেশি পছন্দ?

হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন কেন করছি, তাই ভাবছেন নিশ্চয়? আসলে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ভুট্টা খেলে শরীরের একাধিক মঙ্গল হযে থাকে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীরে ঠাসা রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এ, বি, ই সহ নানাবিধ পুষ্টিকর উপাদান। সেই সঙ্গে রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরও সব উপকারি মিনারেল, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই যেমন ধরুন…

১. ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও আসতে পারে না: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ভুট্টা খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে। তাই তো বলি বন্ধু, যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা প্রতিদিনের ডায়েটে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে রাখতে ভুলবেন না যেন!

২. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: ভুট্টার অন্দরে উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন দেহের অন্দরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে চোখ সম্পর্কিত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। এই কারণেই তো যারা সারা দিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের প্রতিদিন ভুট্টা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: আমাদের দেশে যেহারে ক্যান্সার রোগের প্রকাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ভুট্টা খাওয়া প্রয়োজনও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আসলে ভুট্টার শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের অন্দরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে শুরু করে। ফলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ভুট্টায় ফেরলিক অ্যাসিড নামক একটি উপাদান থাকে, এটি আসলে একটি অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক প্রপাটিজ, যা টিউমার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. শরীর এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: ভুট্টায় উপস্থিত ভিটামিন বি, থিয়ামিন এবং নিয়াসিন ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি ব্রেন সেলের গ্রোথেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এই প্রকৃতিক উপাদানটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্য়াস করলে কোনও ধরনের ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। শুধু তাই নয়, এই পুষ্টিকর উপাদানগুলি শরীরকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তুলতেও সাহায্য করে। তাই তো নিয়িমত ভুট্টা খেলে শরীর এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও চিন্তাই থাকে না।

৫. কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমে: ভুট্টার অন্দরে উপস্থিত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন পাকস্থলির কর্মক্ষমতা বাড়ায়, তেমনি শরীরের বর্জ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে বদ-হজমের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, ফাইবার, নানাবিধ ক্যান্সারকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূরে থাকে: শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি লহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে অ্যানিমিয়া রোগের প্রকোপ কমাতে ভুট্টা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে কোষের গঠনেও সাহায্য করে। তাই এর পর থেকে কোনও সময় যদি রক্তাল্পতার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হন, তাহলে ভুট্টা খেতে ভুলবেন না যেন!

৭. হেলদি ওয়েট গেইন হয়: ১০০ গ্রাম ভুট্টায় কম-বেশি প্রায় ৩৪২ ক্যালরি থাকে। তাই তো ওজন বৃদ্ধির ইচ্ছা থাকলে রোজের ডায়েটে ভুট্টার অন্তর্ভুক্তি ঘটাতেই পরেন। এবার ভুঝেছেন তো বডি বিল্ডাররা কেন এত ভুট্টা খেতে ভালবাসেন! প্রসঙ্গত, ভুট্টার অন্দরে থাকা কার্বোহাইড্রেড, এনার্জির ঘাটতি দূর করে শরীরকে চনমনে করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে দিনের শেষে ক্লান্তি যখন ঘিরে ধরবে, তখন একটা ভুট্টা খেতে খেতে বাড়ি ফিরবেন। দেখবেন কেমন নিমেষে ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

৮. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে: ইন্ডিয়ান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে আমাদের দেশ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্তের নিরিখে একেবারে প্রথম স্থান নেবে। এমনটা যদি বাস্তবিকই হয়, তাহলে যে বেজায় চিন্তার বিষয়, তা আর নিশ্চয় আলাদা করে বলে দিতে হবে না। এমন পরিস্থিতিতে নানাবিধ হার্টের রোগের মার থেকে নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের বাঁচাতে ভুট্টা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বেশ উপকার মিলবে। কিন্তু ভুট্টার সঙ্গে হার্টের ভাল-মন্দের কি সম্পর্ক? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ভুট্টা থেকে তৈরি কর্ন অয়েল খাওয়া শুরু করলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরেলর মাত্রা কমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে তেলটিতে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

৯. দেহের অন্দরে খনিজের ঘাটতি দূর হয়: শরীরকে সচল এবং রোগমুক্ত রাখতে যে যে খনিজের প্রয়োজন পরে, তার বেশিরভাগই মজুত রয়েছে ভুট্টায়। যেমন- ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, মেঙ্গানিজ, জিঙ্ক, আয়রন এবং কপার প্রভৃতি। সেই সঙ্গে রয়েছে সেলেনিয়ামের মতো উপকারি খনিজও। তাই তো নিয়মিত ভুট্টা খেলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে আর কোন চিন্তা থাকে না।