আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের জয়ের ধারাবাহিকতায় তিন সিটিতেও জয় চায় ক্ষমতাসীনরা।
তবে দলের নেতারা বলছেন, তিন সিটিতে জয়ের পথে তিনটি বাধা বা শঙ্কা রয়েছে। এই বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে নির্বাচনে বিজয়ী হতে তেমন একটা বেগ পেতে হবে না ক্ষমতাসীনদের।
তিন সিটি নির্বাচনের দেখভাল করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এমন নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন আশঙ্কা কাজ করছে। যেমন রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে কাজ করছে। তবে এ সিটিতে আওয়ামী লীগের জন্য চিন্তার কারণ বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বিহারি ভোটার ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক জামায়াত-শিবিরের শক্তিশালী ঘাঁটি থাকায় শহরে এখনো জামায়াতের ভালো অবস্থান রয়েছে।
পাশাপাশি বিহারিদের একটা বড় অংশ এখনো মনে করেন, তারা পাকিস্তানি নাগরিক, তাদের বন্ধু বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের একটা ঐতিহাসিক দূরত্ব রয়েছে। অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দীন আহমেদ কামরানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ‘ঘরের শত্রু বিভীষণদের’ মাঠে নামাতে পারা। এবারের নির্বাচনে সিলেট সিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ জন কামরানের বিপরীতে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। ফলে কেন্দ্রের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কমছে না সিলেটের দলীয় কোন্দল। পাশাপাশি বরিশাল সিটিতে নিজ দলের নেতাকর্মীরাই মেয়রপ্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বিজয়ী করতে ভোটের দিন সংঘাত-মারামারি করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, তিন সিটির মনোনয়নের দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো সংঘাত-সহিংসতা আমরা চাই না। নির্বাচন নিয়ে কেউ যেন কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে, এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। বিএনপির মতো মাগুরা মার্কা নির্বাচন দরকার নেই। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য বার্তা দিলেও তিনি মূলত বরিশালের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করেই কথাটি বলেছিলেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধারণা, অন্য জায়গায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও বরিশালে ঝামেলা হতে পারে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান আমাদের সময়কে বলেন, আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে দারুণ আশাবাদী আমরা। তার পরও তিন সিটিতেই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলোর কারণে নৌকার প্রার্থীর বিজয় অর্জন কঠিন হয়ে যেতে পারে।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, অন্যরা এমন আশঙ্কা করলেও আমরা বরিশালে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার কোনো আশঙ্কা দেখছি না। ইতোমধ্যে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, বরিশাল সিটি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটের মধ্য দিয়ে আমাদের দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, দিনাজপুরে সৈয়দপুর, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মতো রাজশাহীতেও আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকরা এত দিনে বুঝতে পেরেছেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল তাদের নিয়ে রাজনীতি করলেও একমাত্র আওয়ামী লীগই তাদের উন্নয়নে কাজ করেছে। আমরা আশা করছি রাজশাহীতে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে থাকবে তারা। ইতোমধ্যে তাদের দিক থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলেও জানান দিনাজপুরের এই সংসদ সদস্য।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা মোটামুটি মাঠে নামতে শুরু করেছেন। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যেই সবাই নৌকার বিজয়ের জন্য মাঠে নামবেন।