সপ্তাহে কমপক্ষে ৪৫ ঘন্টা কাজ করলে নারীদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কানাডার বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে- ৩০ থেকে ৪০ ঘন্টার কাজে নারীদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম। মজার ব্যাপার হলো পুরুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো। বেশি কাজে পুরুষদের বরং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। কানাডার বিজ্ঞানীরা এমনটাই বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ডায়াবেটিস রোগ আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে সেখানে উদ্বেগের শেষ নেই। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে সেদেশে ৩ কোটি ৩০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। অর্থাত্ দেশটির ৯.৪ শতাংশ মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতিবছর ১৫ লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সুখের অসুখ বলে কথা! এ রোগটি বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে চিকিত্সা খরচও, অন্যদিকে মানুষের উত্পাদন সক্ষমতা গেছে কমে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর একটা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গবেষকদের মতে- ডায়াবেটিসের কারণে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ হাজার কোটি ৭০ লাখ ডলারের ক্ষতি গুনতে হয়েছে। এ কারণেই দেশটির নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে টনক নড়েছে। শুরু হয়ে গেছে ডায়াবেটিস নিয়ে ব্যাপক গবেষণার তোড়জোড়। যে গবেষণায় কানাডার বিজ্ঞানীরাও সম্পৃক্ত হয়েছেন।
অধিক কাজে নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে- এমন সিদ্ধান্তে বিজ্ঞানীরা হুট করেই আসেননি, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কানাডার ৩৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ৭ হাজার ৬৫ জন নারী-পুরুষ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাদের মেডিক্যাল রেকর্ডের উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা এমন মতামত প্রকাশ করেছেন। কিছুদিন আগে কানাডার বিজ্ঞানীদের এ গবেষণা রিপোর্টটি ‘বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বিজ্ঞানীরা প্রথমে চারটি গ্রুপে ভাগ করেন: সপ্তাহে ১৫ থেকে ৩৪ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করা নারী-পুরুষদের এক গ্রুপে, ৩৫ থেকে ৪০ ঘন্টা কাজ করা লোকদের আরেকটি গ্রুপে, ৪১ থেকে ৪৪ ঘন্টা কাজ করা লোকদের একটি গ্রুপ এবং ৪৫ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় কাজ করা মানুষদের নিয়ে একটি গ্রুপ করা হয়। তাদের বয়স, লিঙ্গ, তারা কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্ম কোথায়, তাদের লাইফস্টাইল, তারা বিবাহিত কিনা, তাদের ছেলেমেয়ে আছে কিনা, তাদের কখনো কোনো গুরুতর অসুখ হয়েছিল কিনা- এ সমস্ত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়। কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজের ধরনটা কি- গবেষণায় এটাও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
দীঘ ১২ বছর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেল ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। বেশি বয়সী লোকজন এবং স্থূলদেহী লোকদের দেহেই ডায়াবেটিস বেশি ধরা পড়ে। তবে পুরুষ ও নারীদের আলাদাভাবে পরীক্ষা করতে গিয়ে অদ্ভুত বিষয়টি লক্ষ্য করলো বিজ্ঞানীরা। দেখলো যে সমস্ত পুরুষ বেশি কাজ করে থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম, আর মহিলাদের ক্ষেত্রে তার উল্টো। সপ্তাহে ৪৫ ঘন্টা বা তারও বেশি কাজ করা নারীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ৩৫ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করা নারীদের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। মেয়েদের লাইফস্টাইলের সঙ্গেও ডায়াবেটিসের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ধূমপায়ী ও অ্যালকোহল গ্রহণকারী নারীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।