রাজধানী বিভিন্ন অঞ্চলের মহল্লার অলি-গলিতে চোখ রাখলে দেখা যাবে আম ব্যবসায়ীদের। ভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের পাশাপাশি কেউ কেউ নিজের বাসার সামনে অস্থায়ী আমের ব্যবসা বসিয়েছেন। এর সঙ্গে বাজারের স্থায়ী ফল বিক্রেতারাও আছেন।
এক কথায় এখন রাজধানীতে যেন রসালো ফল আমের রাজত্ব চলছে। যার প্রভাব পড়েছে দামেও। বিভিন্ন জাতের আম ফুরিয়ে গেলেও এখনো রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশ সস্তায় মিলছে আম। খুচরা বাজারে ৪০-৬০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু আম।
আম সস্তায় মিললেও জাম, লটকন, জামরুলের মতো দেশি ফলের দাম কিছুটা চড়া। এর মধ্যে জামরুলের দাম সবচেয়ে বেশি। ব্যবসায়ীদের ভাষায় জামরুল এখন বাজারের ‘ভিআইপি’ ফল।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে এখন হাড়িভাঙা ও আমরুপালির প্রাধান্য। অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ীরা এই দুই জাতের আম বিক্রি করছেন ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে। কিছু কিছু ব্যবসায়ী ৮০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করছেন।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ফল বিক্রেতা রাজ্জাক বলেন, ঈদের পর পরই আমের যে দাম ছিল, এখন তার থেকে একটু বেশি। তবে এখনও আম খুব সস্তা। ভালো মানের হাড়িভাঙা ও আমরূপালি মাত্র ৫০ টাকা কেজি। আমি গত পাঁচ বছরের মধ্যে এতো কম দামে বিক্রি করিনি।
তিনি বলেন, এবার আমের ফলন খুব ভালো। প্রতিদিন আড়তে ভরপুর আম আসছে। যে কারণে দামও কম। আর দাম কম হওয়ার কারণে আমাদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০-৫০ কেজি আম বিক্রি হয় অনায়াসেই।
গুলশান লিংক রোডের গুদারা ঘাট সংলগ্ন ফুটপাতে ঝুড়িতে করে আম বিক্রি করা আমিনুল বলেন, আমি কয়েক মাস ধরেই এখানে আম বিক্রি করছি। আগে হিমসাগর আম বেশি চলতো। হিমসাগর ফুরিয়ে গেছে, এখন বাজারে হাড়িভাঙা ও আমরুপালির দাপট। দামও তুলনামুলক সস্তা। গত বছর হাড়িভাঙা আমের কেজি ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করিনি। এখন সেই হাড়িভাঙা আম ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
রাজধানীতে ফলের অন্যতম বাজার বাদামতলি। এই বাজারে কথা হয় রংপুর থেকে আম আনা মো. রইস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার আমের দাম নেই। গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই আমের দাম সবচেয়ে কম। হাড়িভাঙা আম আমরা বিক্রি করছি ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। আর যেগুলো পেকে গেছে, তার দাম আরও কম।
আমের দাম কম হওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামাঅঞ্চলে অধিকাংশ বাড়িতেই আমের গাছ রয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের আমের ওপর কিছু হলেও চাহিদা কমেছে। পাঁচ বছর আগেও এমনটা ছিল না। এসব কারণেই দাম কম।
mango
রামপুরার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবার আম খুব খেয়েছি, এখনো খাচ্ছি। গত ৫-১০ বছরের মধ্যে এত আম খায়নি। বাজারে আমের দাম বেশ কম, স্বাদও ভালো। ওষুধ দিয়ে আম পাকানোর খবরও খুব একটা শোনা যাচ্ছে না।
এদিকে আমের দাম সস্তা হলে অন্য দেশি ফলের দাম কিছুটা চড়া। বিশেষ করে জাম, লটকন ও জামরুলের। খুচরা বাজারে জাম বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। লটকনের কেজি ৮০-১০০ টাকা। আর জামরুল বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে আম যে হারে চাষ হয়, জামরুলের তেমন হয় না। যে কারণে বাজারে জামরুলের সরবরাহ বেশ কম। আর সরবরাহ কম হওয়ার কারণে দাম কিছুটা চড়া।
মতিঝিলের ব্যবসায়ী ফারুক আলী বলেন, এখন বাজারে আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আমের প্রভাবে আপেল, আঙুর, মাল্টার বিক্রি অনেক কমে গেছে। তবে কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা আমের পাশাপাশি অন্য ফলও খেতে চান। এ ধরনের ক্রেতাদের আমের পর এখন পছন্দের তালিকায় রয়েছে জামরুল, জাম ও লটকন। এর মধ্যে জামরুল কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী স্বাদের ফল।
এই ব্যবসায়ী বলেন, ব্যতিক্রমী স্বাদ হওয়ার কারণে জাম ও লটকনের তুলনায় জামরুলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। যে কারণে দামও কিছুটা বেশি। তবে জামরুল সব শ্রেণির মানুষ কিনছেন না।
শান্তিনগরের ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেও জামরুল ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এখন সেই জামরুলের কেজি ১০০ টাকার ওপরে। আগে গ্রামের প্রায় বাড়িতে বাড়িতে জামরুলের গাছ ছিল। এখন কিন্তু তেমনটা নেই। শুধু শহর না এখন খোঁজ নিলে দেখা যাবে অনেক গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারাও জামরুল চেনে। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি গাছ থেকে জামরুল পড়ে পড়ে নষ্ট হতো, মানুষ খেতে চাইতো না। আর এখন জামরুল ‘ভিআইপি’ পণ্যের মতো প্রায় সবাই শখ করে খান।