জামের অসাধারণ কিছু পুষ্টিগুণ

জামের অসাধারণ কিছু – গ্রীষ্মকালীন ফল জাম যা আমাদের দেশে অন্যান্য সব ফলের মধ্যে অন্যতম একটি ফল। ফলের আকার অনুযায়ী আমাদের দেশে দুই ধরনের জাম পাওয়া যায় যেমন বড় জাম বা কালোজাম এবং ছোটজাম। অন্যান্য মৌসুমি ফলের তুলনায় এর স্থায়ীত্বকাল কম হলেও এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে । এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ও ফাইবার সমৃদ্ধ ফলটিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান যেমন জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সটোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এই জাম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আসুন জেনে নিই জাম খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে:

জামে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যালস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যেমন মৌসুমি সর্দি-কাশি ও ইনফেকশনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ। জামে এক ধরনের এসিড রয়েছে যা ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ত্বককে শক্তিশালী করে। এছাড়া ক্ষতিকর আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করতেও জামের ভুমিকা রয়েছে।

মানসিকভাবে সতেজতা বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে:

জাম ফলে গ্লোকোজ, ডেক্সটোজ ও ফ্রুকটোজ উপাদান থাকায় তা কাজ করার প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় । বয়স বাড়ার সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে জামের ভুমিকা রয়েছে। তাই সব বয়সী মানুষের এই মৌসুমি ফলটি খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জাম:

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম অনেক উপকারী। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে মানুষের ডায়াবেটিস উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ জামের বীচির গুঁড়া খেলে ডায়াবেটিস অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ভিটামিন সি–এর ঘাটতিজনিত রোগ দূরীকরণে:

জামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার জন্য এটি দেহে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া, দাঁত ও দাঁতের মাঢ়ি মজবুত, ক্ষয়রোধে সহ মুখের দুর্গন্ধ রোধেও জামের জুড়ি নেই। জামে রয়েছে পানি, লবণ ও পটাসিয়ামে যা গরমের সময় শরীর ঠান্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সহায়তা করে। এতে বেশি পরিমাণের আয়রন থাকায় রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে বিশেষ ভুমিকা রাখে। যাদের মাঢ়ি আলগা হয়ে গেছে, একটুতেই রক্ত পড়ে, তারা জামছালের গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদপিন্ড বা হার্ট ভালো রাখতে:

পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকরা তাজা ফল এবং সবজি খাওয়ার কথা বলে থাকেন। জামে যেসব উপাদান আছে তা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। জাম শরীরের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস করে দেহের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন সরবরাহ কার্যক্রমে সহায়তা করে। এছাড়া রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদপিন্ড ভালো রাখতে জামের ভুমিকা রয়েছে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে জামের ভুমিকা:

জামে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় করছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তাদের খাদ্য তালিকায় জাম রাখা যেতে পারে।

রক্ত আমাশয় দূরীকরণে:

রক্ত আমাশয় দূরীকরণে জামের কচি পাতার রস ২-৩ চা চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২-৩দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।

পচা ঘা বা ক্ষত সারাতে:

পচা ঘা বা ক্ষত সারাতে জাম পাতা সিদ্ধ করে সেই কাথ দিয়ে ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যে ঘা (ক্ষত) তাড়াতাড়ি সেরে উঠছে না, সেখানে জাম ছালের মিহি গুঁড়া ছড়িয়ে দিলে ক্ষত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যায়। পশুপাখির ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে কালো জাম উপকারী:

জাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যান্সারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব মুক্ত করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া জরায়ু ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে জামের কার্যকারিতা প্রমানিত ।

জৈব কীটনাশক হিসেবে জামের ব্যবহার:

জাম পাতার রস শস্য বীজ শোধনে ব্যবহার করা যায়। জামের পাতা পিসে রস করে ১:৪ অনুপাতে দ্রবণ তৈরি করে শস্য ও সবজি বীজ শোধন করা যায়।

জাম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। এটি এমন একটি ফল যার উপকারিতা অনেক বেশি। এটি শুধু আমাদের রসনাতৃপ্তিই মেটায় না; এর মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। তাই নিয়মিত জাম খাওয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা দরকার। ভরা পেটে পাকা জাম খেলে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও অনেকের পেটে ব্যথা হতে পারে তাই এই বিষয়টি খেয়াল রাখলেই হবে।