গল্পঃ দ্বিতীয় বাসর
লেখিকাঃ শারমিন রহমান
–পরী শুনছো?
–জ্বী শুনছি বলেন।।
–শপিং এ চলো। যেটা পছন্দ আর যতটা পছন্দ ততটা জামা,শাড়ি,গয়না সব কিনে দিবো আমার বউটাকে।
–এতো জামা,শাড়ি দিয়ে আমি আর কি করবো? বোরখা ছাড়া তো অন্য কিচ্ছু পরতে দাওনা। আমি তো ভাবলাম বিয়ের পর আমাদের প্রথম ঈদেও বোরখা কিনে দিবা।
–আহহা বুঝেনা গো! শাড়ি ড্রেস আর যাবতীয় সবকিছু পরবে আমার জন্য। তুমি পরীর মতো করে সাজবে আর আমি জোৎস্না রাতে পাশে বসিয়ে চাঁদের আলোয় আমার সেই পরীটাকে দেখবো।
আর বোরখা তো বাহিরের জন্য।
–হয়েছে যত্ত ঢঙ! কত করে বললাম সেদিন বান্ধবীর বিয়েতে শাড়ি গয়না পরে যাই। দিলেইনা। সেই বোরখাই পরালে…আর সবাই কত সুন্দর করে সেজে গেছে। কেউ বোরখা পরেনি। 😞
–সেই সবাইকে তো অন্য পুরুষ দেখে। আমার বউকে কেনো দেখবে??
আমার বউ তো আমার কাছে বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তি নয় যে অন্য কাউকে দেখাতে হবে। আমার বউ আমার অমূল্য সম্পদ।
–কিন্তু অনুষ্ঠানে বোরখা পরলে সবাই মনে করে হয়তো পরার আর ভালো কিছু নেই। কিন্তু তুমি তো আমাকে সবই কিনে দাও। 😞
–মনে করুক। আমার কি আছে না আছে তা মানুষকে দেখিয়ে বড়াই করা খুব একটা সম্মানের কিছুনা। বরং ছোট মনের পরিচয় দেয়।
–এত্ত ভালো হতে গেলে কেনো তুমি??? (চোখে পানি চলে এলো মেয়েটির) কত্ত লোকরা বউকে সাজিয়ে বাইরে নেয়। আবার ওরা বউ পাশে থাকলে অন্য মেয়ের দিকেও বদনজর দেয়। কিন্তু বাহিরে তোমার দৃষ্টি সবসময় অবনত!
এতো ভালো কেনো তুমি???
–আমি ভালো কিনা জানিনা। আমার পরীর চোখে যদি ভালো হয়ে থাকি সেটা শুধুই আমার আল্লাহর জন্য। আমার রবের খুশির জন্য। কক্ষনো যেনো আমার এসব বিষয় তোমার চোখে বিরক্তের না হয়ে যায়!
–কক্ষনো না। আগে আমিই ভুল ছিলাম। ভাগ্য করে তোমায় পেয়েছিলাম বলেই এখন হয়তো আল্লাহর কাছাকাছি যেতে পারছি….
ঈদের রাতে যখন আকাশে বাঁকা চাঁদ হাসে ঠিক সেই মুহূর্তে মেয়েটার জন্য দারুণ সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে….
ওর স্বামী চোখ বেঁধে ওকে ছাদে নিয়ে এলো। চোখ খুলে দিতেই মেয়েটা চারপাশে তাকিয়ে অসম্ভব রকমের অবাক হয়!
সাথে সাথেই সুখে চোখ বেয়ে গড়িয়ে যায় দুফোটা নোনাজল!
ভাবে এতোটা ভালোবাসাই কি ওর মতো কদর্য কারও জন্য স্রষ্টা দিয়ে দিয়েছেন?? এত্তটাই??
স্বামী তার চোখ মুছে আলতো করে কপাল ছুয়ে দিলো….
ফ্লোরে বিছানা পাতা! তার চারপাশে ছিটানো অজস্র গোলাপের পাপড়ি। আর তার চারদিকে প্রজ্জ্বলিত সব রঙ্গিন মোমবাতি!
মেয়েটির পরনে নীল শাড়ি!
মেহেদী রাঙ্গা হাতে দুমুঠো চুড়ি। ঝুমকো কানের দুল!
দীঘল এলো চুল!
আলতা রাঙ্গা পা!
আর গয়না ভরা গা…..
ঠিক যেনো একটা হুরপরী!
–দেখো পরী! আকাশেও একটা চাঁদ আমার পাশেও একটা চাঁদ…..
আকাশের চাঁদকে সবাই দেখে। কিন্তু আমার চাঁদকে এই রুপে আমি ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ দেখবেনা….পরীর সব সৌন্দর্য শুধু আমার জন্যই!
–অবশ্যই জনাব!
–পরীর কোলে মাথা রেখে আর আকাশের তারা গুনতে গুনতে প্রশান্তির ঘুম দিবো,ঠিক সেদিনের মতো যেদিন আমাদের প্রথম বাসর ছিল….!
—বাসর প্রথম/দ্বিতীয় হয় বুঝি???
–কেনো হবেনা!?? এইতো আজই আমাদের দ্বিতীয় বাসর! এভাবে আমরণ আমাদের এই দিন আসতেই থাকবে তো পরী!
–ইনশাআল্লাহ!
নারীর আত্নার প্রশান্তি কোথায় জানো?? ঠিক এই জায়গাটায়…যখন তার স্বামীর ভালোবাসায় তার জীবন পরিপূর্ণ!
–ওই গানটা করোনা গো….
–কোনটা গানটা?
–ওইযে
“আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে,যদি পরাণ টারে রাখিস ঢেকে তোর পরাণের ছায়াতে”……