এই গরমে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিন তেঁতুল জল খাওয়ার পরামর্শ কেন দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা?

শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বাস্তবিকই তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান দেহের অন্দরে প্রদাহ কমানোর মধ্যে দিয়ে একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে এবং ত্বকের পরিচর্যায় এই ফলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই রোগ মুক্ত সুস্থ শরীর যদি পেতে চান, তাহলে সপ্তাহে কম করে ৩-৪ দিন জমিয়ে তেঁতুল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবেই মিলবে!

প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীরে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদানে পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, ই এবং বি। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ডায়াটারি ফাইবার। এখানেই শেষ নয়, একাধিক শক্তাশালী অ্যান্টিঅক্সিডন্টেরও দেখা মেলে এই ফলটির অন্দরে, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখে। যেমন ধরুন…

১. আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের প্রকোপ কমায়:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে জয়েন্ট পেনের প্রকোপ তো কমেই, সেই সঙ্গে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগও ধারে কেছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে বুড়ো বয়সে গিয়ে শরীরের সচলতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

২. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়:

অনবরত সূর্যালোক, পরিবেশ দূষণ এবং ধুলো-বালির আক্রমণে ত্বকের বারোটা বেজে যেতে সময় লাগে না। আর এমন পরিস্থিতিতে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে তেঁতুলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে ৩০ গ্রাম তেঁতুল নিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে পরিমাণ মতো গরম জল এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এইভাবে সপ্তাহে দুবার ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন এত ধুলো-বালির মাঝেও ত্বকের সৌন্দর্য একটুও কমবে না।

৩. ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না:

সরাসরি না হলেও প্ররোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুনভাবে কাজে এসে থাকে। আসলে এই ফলটিতে উপস্থতি বেশ কিছু এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে সুগারের কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়তে থাকলে নানা কারণে রক্তে শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই তো অনিয়ন্ত্রত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

তেঁতুলে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটতে একেবারে সময় লগে না। এখানেই শেষ নয়, তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় “বিলিয়াস সাবস্টেন্স” যা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, একাদিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ক্রনিক কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দূর করতেও তেঁতুল দারুন কাজে আসে। এক কথায় পেটের অন্দরে ঘটে চলে ছোট-বড় প্রতিটি কাজ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে এই ফলটি। ফলে যে কোনও ধরনের পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

৫. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:

বি কমপ্লেক্স হল এমন ভিটামিন, যা ব্রেন ফাংশনের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই ভিটামিনটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নার্ভ সেলের শক্তি বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কগনেটিভ ফাংশনে উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, তেঁতুলে বি কমপ্লেক্স ভিটামনিটি রেয়েছে প্রচুর মাত্রায়। তাই তো পড়াশোনা হোক কী কর্মজীবন, যে কোনও ফিল্ডে যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে তেঁতুল খাওয়া মাস্ট!

৬. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:

একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে তেঁতুলের অন্দরে থাকা একাদিক ভিটামিন এবং খনিজ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা কমাতে ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল কোনও খামতিই রাখে না। তাই শরীর যখন এই দুই ক্ষতিকর রোগ থেকে দূরে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কোনও সুয়োগই থাকে না। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন তেঁতল খাওয়া কতটা জরুরি।

৭. দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:

মশলা হিসেবে তেঁতুলকে কাজে লাগালে শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক অ্যাসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে সার্বিকভাবে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ক্ষিদে কমে যায়।আর একবার কম খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে সময় লাগে না।

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে তেঁতুলে খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।