থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। এটা autosomal recessive ধরনের। বাবা-মা উভয়েই যদি এই রোগের বাহক হন, তাহলে গড়ে তাদের প্রতি চার সন্তানের একজন এই রোগের রোগী হতে পারে। বাহক কখনোই রোগে ভুগেন না। সাধারণ জীবনযাপন করেন। বাবা-মা খুব বেশি সৌভাগ্যবান হলে তারা উভয়ে বাহক হওয়া সত্ত্বেও সন্তানেরা স্বাভাবিক বা বাহক হতে পারে। আর বাহক বাবা-মা হতভাগা হলে এমনকি তাদের সব সন্তান কাকতালীয়ভাবে রোগী হতে পারে।
বাবা-মায়ের যেকোনো একজন বাহক হলে সন্তানেরা কখনোই রোগী হবে না। কিন্তু বাবা-মা উভয়ে বাহক হলে সব ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ, সে ক্ষেত্রে সন্তানদের কেউ কেউ রোগী হতে পারে। autosomal recessive ধরনের রোগ সাধারণত আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে হয়। কিন্তু একটি সমাজে এর বাহকের সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন আত্মীয়ের বাইরে বিয়ে হলেও এ রোগ হতে পারে। জানা যাচ্ছে, আমাদের দেশে এই রোগের বাহক এবং তার ফলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে! ফলে এখন থেকেই সাবধানতা জরুরি।
যখন কেউ রোগী হন তখন সেই রোগটার নাম- beta thalassaemia major (বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর)। আর বাহক হলে সেই অবস্থাটার নাম- beta thalassaemia trait or beta thalassaemia minor (বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর)।
এ রোগ হলে রাগীকে সারা জীবন অন্যদের থেকে রক্ত গ্রহণ করে টিকে থাকতে হয়। এ ধরনের রোগীরা পিতা-মাতার বোঝা হয়ে গড়ে ২৫-৩০ বছর বেঁচে থাকে। আর রক্ত গ্রহণে থাকে নানাবিধ ঝামেলা। শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হৃদপিণ্ড লিভার গিরার রোগ হতে পারে। দাতার শরীর থেকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু ঢুকতে পারে রোগীর শরীরে।
এ ছাড়াও নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের আছে আরো বহু জটিলতা। একদিকে থ্যালাসেমিয়া অন্য দিকে সেটার চিকিৎসার কারণে নতুন করে অন্য অঙ্গের রোগ! কত কষ্ট! কত কষ্টের জীবন! অথবা রোগীকে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়। সেটা করতে গিয়েও থাকে নানাবিধ নতুন রোগের ঝুঁকি।
কিন্তু এসব ঝুঁকি এড়ানোর একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস করানো। মূল্য আনুমানিক এক হাজার টাকা। এ পরীক্ষা করে কেউ যদি দেখেন যে, তিনি একজন বাহক; তাহলে তিনি যেন কোনো অবস্থাতেই অন্য একজন বাহক বা রোগীকে বিয়ে না করেন। করলে কিন্তু সেই দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসবে। সন্তানদের কেউ কেউ রোগী হতে পারে। সেটা হলে সারা জীবন সেই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। অথবা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মতো জটিল চিকিৎসা করাতে হবে।
আর যারা রোগী, তারা তো ছোটকাল থেকেই রোগী। তারা তো বেঁচেই থাকে ২৫-৩০ বছর! সে কারণে তাদের বিয়ের প্রশ্নটি এমনিতেই অবাস্তব!
অনেকেই হয়তো বলবেন, ‘আমিতো বিয়ের আগে এই পরীক্ষা করাইনি, আমিতো ভালো আছি’। এর উত্তর হচ্ছে- সবার এমনটা হবে না। কিন্তু যিনি এটার শিকার হবেন, তিনি বুঝতে পারবেন কত ধানে কত চাল। রোগীর চাইতে বরং রোগীর বাবা-মা বেশি দুর্বিষহ জীবনযাপন করবেন। কারণ, তারা আক্রান্ত সন্তান নিয়ে বছরের পর বছর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করবেন।
হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে সময় পার করবেন, নাকি কর্মস্থলে গিয়ে পেটের ভাত জোগাড় করবেন নাকি আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার খরচ যোগাবেন? তিন দিকে টানাটানি!
আমি ২০০৯ সালে এই কারণে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস করেছিলাম। ফলাফল স্বাভাবিক ছিল।
তাই বিয়ের আগে নিজের ভালোর জন্যই হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস এবং রক্তগ্রুপ পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসককে তার ফলাফল দেখান।
লেখক : চিকিৎসক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আরো পড়ুন :
শিশুর বমি
ডা: শাহিদা হোসাইন
বিভিন্ন কারণে শিশুরা বমি করতে পারে। বমির বেশির ভাগই হয় খাওয়ায় গোলমালের জন্য। তবে যে কারণেই হোক না কেন অবেহলা করা উচিত নয়।
নবজাতকের বমির জন্য আরো সচেতন হওয়া উচিত। কারণ-
প্রথম সপ্তাহের কারণ
নিওনেটাল গ্র্যাসট্রাইটস- যদি হওয়ার সময় মায়ের কিছু গিলে ফেলে,
খাওয়ানোর গণ্ডগোল, বেশি খাওয়ানো অথবা বাতাস ঢুকানো হলে। সঠিক নিয়মে দুধ না খাওয়ালে বা খাওয়ানোর সময় খেয়াল না করলে বাতাস ঢুকে যেতে পারে, বাচ্চা দুধ কম পেলে বা বেশি পেলে বা নিপলের কম অংশ পুরোপুরি মুখে না নিলে অথবা বোতলে খাওয়ানোর সময় বাতাস ঢুকতে পারে। অনেক সময় শিশু খেতে চাইলে মায়েরা জোর করে খাওয়ান এতেও বমি হতে পারে।
* খাবার পরিবর্তন হলেও বমি করতে পারে।
যে খাবারে প্রথমবার বমি করে দ্বিতীয়বার দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে।
* ট্রাকিওইসোফেজিয়াল ফিস্টুলা, শ্বাসনালী ও গলবিলের মধ্যে যদি যোগাযোগ থাকে।
* কোনো কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রে বাধাপ্রাপ্ত হলে।
* মস্তিষ্কের কোনো আঘাত শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও মস্তিষ্কের ঝিল্লির প্রদাহ।
* গ্যালাক টোসেমিয়া, ফিনাইল ফিটো নিউরিয়া।
প্রথম সপ্তাহের পর যদি থেকে যায়
খাওয়ানোর গণ্ডগোল।
খাবার উদগীরণ।
পাকস্থলীর শেষ অংশ সরু হয়ে যাওয়া।
অন্ত্র বাধাগ্রস্ত হওয়া।
অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ।
টনসিলে প্রদাহ।
শিশু বড় হলে কৃমির জন্য বদ হজম হলে, ডায়রিয়া সাথে বমি করতে পারে। জন্ডিস, মূত্রনালীর প্রদাহ, পেটের কোনো অসুখ হলেও বাচ্চারা বমি করে। বমি যে কারণেই হোক ব্যাপারটি একটি দুঃসহনীয় ব্যাপার। বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বমির কারণে শরীর থেকে অনেক পানি এবং ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায় তাই রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
বমির সাথে সাথে খাবার স্যালাইন দিতে হবে যাতে পানি শূন্যতা না হয়। জোর করে খাওয়ালে পুনরায় বমি করতে পারে সেজন্য যেকোনো খাবার আস্তে আস্তে অল্প অল্প বার বার খাওয়াতে হবে। যদি তাতেও না কমে তবে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দিতে হবে বমির কারণ নির্ণয় করে।