দাঁতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, হাঁটু ব্যথা সবেতেই মুশকিল আসান হিসেবে আমাদের রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে পেইন কিলার। টপ করে গিলে ফেললেই পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার জন্য মেলে সাময়িক স্বস্তি। তাই কোনও চিন্তা ভাবনা না করেই ছোটো থেকে বড়ো সব রকম ব্যথাতেই প্রথম সহায় হয় ব্যথা কমানোর ওষুধ। ব্রিটেনের একটি সমীক্ষা থেকে সম্প্রতি জানা গিয়েছে অতিরিক্ত পেইন কিলারের ব্যবহার প্রায় ৩১ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগের সম্ভাবনা।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, ব্যথা কমানোর জন্য যে প্রচলিত ওষুধ আমরা ব্যবহার করি, তা হৃদরোগের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয় অনেকটা। আইবুপ্রোফেন, ডিক্লোফেনাক ইত্যাদি ওষুধ বেশি ব্যবহার করলে এমন অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে হৃদপিণ্ড হঠাৎ রক্ত সঞ্চালন করা বন্ধ করে দিতে পারে। এই অবস্থার নামই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
গবেষক দলের প্রধান গুন্নার গিস্লাসনের মতে, “এই ধরনের ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া দোকানে পাওয়া যায়, তাই মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয় – এ সব ড্রাগ নিরাপদ, যখন তখন খাওয়া যায়”। তিনি আরও বলেন, এখন থেকে নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি ড্রাগস (এনএসএআইডি) বিক্রির সময় সতর্ক বার্তার উল্লেখ থাকা উচিত। ‘ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গুন্নার এবং তাঁর সহকর্মীদের গবেষণা পত্রটি।
২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যেত ডিক্লোফেনাক ওষুধ। সমীক্ষায় ধরা পড়ে, এই ওষুধ হৃদরোগের সম্ভাবনা প্রায় দেড় গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তারপর থেকে সে দেশে বন্ধ হলেও আমাদের দেশে এখনও এই ওষুধ কেনার জন্য প্রেস্কিপশনের প্রয়োজন হয় না।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ডেনমার্কে শেষ দশ বছরে ২৮৯৪৭ জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৩৭৬জন শেষ এক মাস টানা ব্যবহার করেছিলেন এনএসএআইডি ওষুধ। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফল বলছে পেইন কিলারের ব্যবহার হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ানো ছাড়াও বাড়িয়ে দেয় শরীরের রক্তচাপ। এছাড়া রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতাও কমে আসে।