সময় দেখার জন্য হাতঘড়ির ব্যবহার বহুল প্রচলিত। বর্তমানে অবশ্য অনেকের কাছে সময় দেখা ছাড়াও, স্টাইল হিসেবেও হাতঘড়ি পছন্দ। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছেন, ঘড়ি ডান হাতের পরিবর্তে বাঁ হাতে কেন পরা হয়? এর রহস্যটা কী? মজার বিষয় হলো বেশিরভাগই জানেন না কেন এমনটা করে থাকেন তারা।
এক সমীক্ষায় এমন প্রশ্ন করা হলে বেশিরভাগ জাবাব দিয়েছিল, বাকি অনেককে দেখেন, তাই তারাও নাকি কিছু না ভেবেই তাদের অনুসরণ করে বাঁহাতে ঘড়ি পরা শুরু করেছেন। কেন বেশিরভাগ মানুষ বাঁহাতে ঘড়ি পরে থাকেন তার উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে জীবনধারা বিষয়ক সাময়িকী বোল্ডস্কাই।
ইতিহাস কী বলছে :
বেশ কিছু গবেষণার পর একদল গবেষকের মনে হয়েছিল, শরীরের গঠনকে যদি গুরুত্ব দেয়া হয়, তাহলে ছেলেদের নাকি ডান হাতে এবং মেয়েদের বাঁ-হাতে ঘড়ি পরা উচিত। কিন্তু তারপরও এই নিয়মটা কেউ মেনে চলে না কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যখন ছোট ঘড়ির জন্ম হয়েছিল, তখন বেশিরভাগই তা পকেটে রাখতেন। এ জন্য পকেট ঘড়ির চল সে সময় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে বোর যুদ্ধের সময় একদল সৈনিক চামড়ার স্ট্র্যাপে ঘড়ি আটকে কবজিতে পরা শুরু করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মিলিটারি অপারেশনের প্রতি মিনিটকে নথিবদ্ধ করা। আর এমনটা করতে গেলে বারে বারে পকেট থেকে ঘড়ি বের করা ছিল বেজায় মুশকিলের কাজ। আর এ জন্যই সে সময় থেকে শুরু হয়েছিল কবজিতে ঘড়ি পরা। তবে তখনও তা আম জনতার মধ্যে সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
কিন্তু বাঁ-হাতে কেন :
একথা ঠিক যে হাত ঘড়ির জন্মলগ্ন থেকেই বাঁহাতে ঘড়ি পরা শুরু হয়েছিল। কারণ ছিল একটাই। আসলে সে সময়কার হাত ঘড়ি ছিল বেজায় বড় এবং ভঙ্গুর। তাই সহজেই যাতে কোথাও ঠোকা লেগে ঘড়িটা ভেঙে না যায়, তা সুনিশ্চিত করতেই বাঁহাতে ঘড়ি পরা শুরু হয়েছিল। কারণ বিভিন্ন কাজ করতে ডান হাত যতটা কাজে লাগে, ততটা কিন্তু বাঁহাত কাজে আসে না। তাই যদি বাঁহাতে ঘড়ি পরা যায়, তাহলে ভাঙার আশঙ্কা কম। তাই তখন থেকেই শুরু বাঁহাতে ঘড়ি পরার রেওয়াজ।
বিজ্ঞান কী বলছে :
ইতিহাস ঘেঁটে বাঁহাতে ঘড়ি পরার কারণ সম্পর্কে ধারণা করা গেলেও এ সম্পর্কে স্পষ্ট উত্তর পাওয়া সম্ভব বিজ্ঞানের হাত ধরেই। একাধিক গবেষণার পর এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে সিংহভাগ মানুষই ডান হাতে কাজ করতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করে । আর ডানহাতি মানুষদের চোখের গতিবিধি বিচার করলে একথা বুঝতে অসুবিধা হয় না বাঁহাতে ঘড়ি পরলে সহজে সময় দেখা সম্ভব। আর যদি ডান হাতে ঘড়ি পরা হয়, তাহলে কাজ করত করতে যদি সময় দেখার প্রয়োজন পরে, তাহলে কাজ থামিয়ে তা করতে হবে। এতে বাঁহাতে ঘড়ি পরলে তা করার প্রয়োজন পরে না। তাই বেশিরভাগই বাঁহাতে ঘড়ি পরা শুরু করল। এক সময়ে ঘড়িকে বাঁচাতে যেখানে বাঁহাতে ঘড়ি পরা শুরু হয়েছিল। সেখানে এক সময়ে এসে তা প্রয়োজনে রূপান্তরিত হল। আর এই প্রয়োজন কখন যে অভ্যাসের রূপ নিলো, তা অনেকেরই জানা নেই।
স্মার্ট ওয়াচের যুগে :
বর্তমান বিশ্বে দুনিয়ায় সব কিছুই স্মার্ট। ফোন স্মার্ট, এমনকি ঘড়িও। এ জন্য বাঁহাতে ঘড়ি পরার প্রয়োজন আরো বেড়েছে। কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ ডান হাতি। আর বাঁহাতে ঘড়ি পরলে তবেই না ডান হাত দিয়ে সহজে তা অপারেট করা সম্ভব হবে। তাই বর্তমানে বাঁহাতে ঘড়ি পরার প্রয়োজন বেড়েছে আরো বেশি মাত্রায়। প্রাচিন কালের হাত ঘড়ি এতটাই ভঙ্গুর ছিল যে ডান হাতে পরলে তার আয়ু একদিনও হত না। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই বাঁ-হাতে পরতে হয়েছিল ঘড়ি। এরপর সে অভ্যাস ধীরে ধীরে মাসল মেমোরিতে রূপান্তরিত হয়।
কী এই মাসল মেমোরি :
একটা কাজ বার বার করতে থাকলে তা মস্তিষ্কের অন্দরে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে। ফলে তা অভ্যাসে রূপান্তরিত হয়। আর মুষ্টিমেয় মানুষের অভ্যাস যখন অনেকের অভ্যাসে রুপান্তরিত হয়, তখন সেই অভ্যাসকে বদলায় এমন সাধ্য কার। তাই তো বাঁহাতে ঘড়ি পরার পিছনে যতটা ইতিহাসের অবদান রয়েছে, ততটাই রয়েছে শরীর বিজ্ঞানেরও। কারণ বাঁহাতে ঘড়ি পরলে যতটা সুবিধা হয় দেখতে, ততটা হয় না ডান হাতে পরলে। তাই এখন যেমন সবাই বাঁহাতে ঘড়ি পরছে, আগামী দিনেও পরবে এবং এভাবেই চলতে থাকবে।