পবিত্র রমজান মাসে এবার গরমটা একটু বেশিই জানান দিচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা জরুরি। নিত্যদিনের অফিস ও কাজকর্ম সেরে অনেক রোজাদার ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর তৃষ্ণা মেটাতে ইফতারে অনেকে নানা ধরনের শরবত ও কোমল পানীয় পান করে। কিন্তু কোমল পানীয় এবং এসব শরবতে থাকতে পারে ক্ষতিকর জীবাণু। এ ক্ষেত্রে নির্ভেজাল ও নিরাপদ পানীয় পান করতে চাইলে ডাবের পানির বিকল্প নেই। অনেক রোজাদার ইফতারে ডাবের পানি পান করে। প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ এ পানীয় যেমন পুষ্টিগুণে অনন্য, তেমনি গরমে অত্যন্ত প্রশান্তিময়। তীব্র গরমে শারীরিক পরিশ্রমের ফলে শরীর হারায় প্রয়োজনীয় খনিজ ও তরল পদার্থ। এক গ্লাস ডাবের পানি সেই অভাব পূরণ করতে পারে নিমেষেই।
কয়েকজন পুষ্টিবিদ জানান, ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে, পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে ডাবের পানি খুব কার্যকর পানীয়। একটি ডাবের পানিতে চারটি কলার সমান পটাসিয়াম আছে, আছে প্রাকৃতিক শর্করা। ফলে শরীরকে সতেজ করে এবং শক্তি দেয়। ডাবের পানি শরীরের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে ডাবের পানিতে, যা হাড়কে করে মজবুত। সেই সঙ্গে জোগায় ত্বক, চুল, নখ ও দাঁতের পুষ্টি। এ ছাড়া ডাবের পানি হজমের সমস্যা দূর করে, দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য।
মোটামুটি সব ঋতুতে ডাবের পানির সমান কদর। তবে গরমে ডাবের কদর অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। পিপাসা মেটাতে, শরীরে তাত্ক্ষণিক শক্তির জোগান দিতে ডাবের পানি উত্তম পানীয়। সারা দেশেই মেলে এই ফল। রাস্তার মোড়ে, ফুটপাতে প্রায়ই দেখা যায় ডাব বিক্রেতা। কচি অবস্থায় দেশের বেশির ভাগ নারকেল সবুজ ও হালকা হলুদ রঙের। অর্থাৎ কচি নারকেলই ডাব। পাকলে তা নারকেল। নারকেলের ওপর যে স্তর থাকে সেটা ছোবড়া। ছোবড়ার কঠিন খোলসের ভেতর থাকে সাদা রঙের শাঁস ও পানি। সাধারণত কচি ডাবে শাঁস থাকে না। তখন পানির পরিমাণ থাকে বেশি। পাকলে ছোবড়ার সবুজ রং বদলে যায়। আর শাঁস বাড়তে থাকে। কমতে থাকে পানি। হালকা শাঁসযুক্ত পানি অত্যন্ত সুমিষ্ট। অনেকে আবার পছন্দ করে কচি ডাবের পানি।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বারডেমের সামনে ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছিলেন সানোয়ার মিয়া। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ডাব বিক্রি করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে তিনি ডাব হাতে নিয়েই বুঝতে পারেন কোনটায় কতটুকু পানি আছে, কোনটায় সর বা শাঁস হয়েছে, কোনটার শাঁস শক্ত হয়েছে, কোনটায় পানি কম। মাঝারি আকারের প্রতিটি কচি ডাবের দাম একটু বেড়েছে। অন্য সময় যে ডাবের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, এখন সেটার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একটু বড় আকারের প্রতিটি কচি ডাবের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ডাবের দাম বেড়েছে কেন জানতে চাইলে সানোয়ার মিয়া বলেন, ‘গরমে ডাবের চাহিদা বেশি। চালান আগের মতো নাই। কারওয়ান বাজার থেইকা ডাব কিনি। বাজারেও চড়া দাম। কী করমু কন?’
মগবাজার মোড়ে ফ্লাইওভারের নিচে ডাব বিক্রি করছিলেন ষাটোর্ধ্ব রহিম বেপারী। তাঁর ভ্যান ভর্তি ডাব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেখা যায়, প্রচুর ডাব বিক্রি হচ্ছে। ইফতারের আগে অনেকেই ডাব কিনছিল। প্রতিটি কচি ডাবের দাম ৪০ টাকা। একটু বড় আকারের ডাবের দাম ৫০ টাকা। তবে একসঙ্গে দুটি ডাব কিনলে পাঁচ টাকা কম রাখছেন বিক্রেতা। মগবাজারের বাসিন্দা ফেরদৌস হাসান দুটি ডাব কিনলেন। রহিম বেপারী দুটি ডাবের মুখ কেটে দিলেন। কিন্তু ছিদ্র করেননি। দুটি ডাবের কচি ছোবড়া খুলে একটির সঙ্গে অন্যটি বেঁধেও দিলেন। ফেরদৌস হাসান বলেন, ‘ইফতারে ডাবের পানি খেতে চেয়েছিলেন আম্মা ও আব্বা। তাঁদের জন্য ডাব কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’
মগবাজারের রহিম বেপারীর ভ্যান থেকে ডাব কিনছিলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা রিয়াদুল আমিন। চারটি ডাব কেনেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে রিয়াদুল আমিন বলেন, ‘একটি এক লিটারের কোমল পানীয়ের দাম ৬৫ টাকা। কোমল পানীয় শরীরের জন্য আসলেই ক্ষতিকর। অন্যদিকে একটি ডাবের দাম নিচ্ছে ৪০ টাকা। দামের চেয়ে বড় কথা, ডাবের পানি শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সে জন্যই আমি মাঝেমধ্যে ডাব কিনি। কখনো কখনো ইফতারের মেন্যুতেও রাখি ডাবের পানি।’
একটি বেসরকারি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘ডাবের পানিতে প্রচুর পটাসিয়াম রয়েছে। ডাবের পানি খেলে পটাসিয়ামের জন্য শরীরে একটা শীতল আমেজ আসে। পটাসিয়াম হার্টের রোগীর জন্য ভালো। তবে শরীরে যদি পটাসিয়াম বেশি থাকে, তবে ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়। এ ছাড়া যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্যও ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়।’ ডাবের পানির অন্যান্য পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করে রেজওয়ানুল ইসলাম আরো বলেন, ‘গরমের জন্য অনেকের ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতা হতে পারে। ডাবের পানি আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধ করে। আমাদের ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফ্লোরাইডসসহ নানা খনিজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ডাবের পানি তা পূরণ করতে পারে।’