জাপানের বহুল আলোচিত- প্রতি বছর এপ্রিলের প্রথম রোববার জাপানের কাওয়াসাকি অঞ্চলের লোকেরা সাড়ম্বরে পালন করে একটি ধর্ম অনুষ্ঠান যার নাম কানামারা মাৎসুরি (Kanamara Matsuri)। জাপানের কাওয়াসাকির একটি মন্দিরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবটি প্রধানত ধর্ম বিশ্বাসের অনুষ্ঠান যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পুরুষের দন্ডের মত উত্থিত লিঙ্গ। পৃথিবীব্যাপী এটি Penis Festival বা লিঙ্গ উৎসব নামে পরিচিত।
পেনিস ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হয় জাপানের কাওয়াসাকির কানাইয়ামা মন্দিরে, যা ইতিমধ্যেই পেনিস মন্দির হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে। এই মন্দিরের বয়স ৭০০ বছরেরও বেশী। মন্দিরে একসময় যৌনকাজ করা মেয়েরা আসতো প্রার্থনার জন্য যাতে এসটিডি (Sexually Transmitted Diseases) থেকে মুক্ত থাকতে পারে, এরপর উৎপাদনে (বাচ্চা), এমনকি শস্য উৎপাদনের জন্য এই মন্দিরে ভক্তরা প্রার্থনার জন্য আসেন।
ধারণা করা হয়, খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে প্রথম প্রচলন হয় এই বিচিত্র উৎসবের। যখন স্থানীয় বারবনিতারা বসন্তের শেষে বিশাল পুরুষাঙ্গের রেপ্লিকা নিয়ে মিছিল করে যেত কাওয়াসাকি কানামারা মঠে প্রার্থনা করতে। যেন তারা সারা বছর যে কোনো ধরনের যৌন সংক্রমণ বা রোগ থেকে বাঁচতে পারে।
মূলত এটি একটি শিন্তো ধর্মীয় উৎসব, যার মাধ্যমে প্রজনন শক্তি বৃদ্ধির জন্য বন্দনা করা হয়। জানা যায়, ১৬০৩ থেকে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বারবণিতারা যৌণব্যাধি বিশেষ করে সিফিলিস থেকে রক্ষা পাবার জন্য, ঘটা করে এই মেলা উদযাপন করতো। অবশ্য বর্তমানে এই উৎসব ভিন্ন মর্যাদা পেয়েছে। বর্তমানে এটি পালিত হয় নিরাপদ যৌনতা, এইডস সংক্রমণ রোধ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার অংশ হিসেবে।
উৎসবে হাজার হাজার লোক জড়ো হন। সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে লিঙ্গ রেলি। মন্দিরের কাঠের লিঙ্গটি নিয়ে রেলিতে বের হন ভক্তরা। সাথে থাকে আরো বড় বড় লিঙ্গ এবং সবার হাতে হাতে পুরুষদের লিঙ্গ সদৃশ খেলনা বা বস্তু ।
ফেষ্টিভালের সময়ে সেখানে লিঙ্গ আকৃতির বিভিন্ন আইসক্রিম, ফাষ্টফুড, খেলনা বিক্রি হয়, কেউ ইচ্ছে করে সেগুলো কিনে খেতে পারে, লিঙ্গের উপর বসতে পারে, লিঙ্গের সাথে ছবি উঠতে পারে, লিঙ্গের মাথায় চুমুও খেতে পারে। সাধারণত মেয়েরা আবার এসব ব্যাপার খুবই আগ্রহী হয়ে থাকে।
এবছরও জাপানের কাওয়াসাকি অঞ্চলের সিন্টো ধর্মালম্বী লোকেরা বিশাল পুরুষাঙ্গের রেপ্লিকা নিয়ে নেচে গেয়ে মিছিল করে আনন্দ প্রকাশ করেছে। রাস্তায় রাস্তায় ছোট থেকে বড় সবাইকে দেখা গেছে পুরুষাঙ্গের আদলে তৈরি চকলেট আর আইসক্রিম চুষতে। অনেককেই ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা গেছে বিশালাকৃতির পুরুষাঙ্গের পাশে। মাথায় পেনিস টুপি পরিধান করে নাচগান করেছেন অনেকেই।
গত ৬ এপ্রিল ২০১৪ মরণব্যাধি এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রমের ফান্ড রেইজিং ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়েছে এই মেলা। ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে এই উৎসব চলে টানা ৭ এপ্রিল রাত পর্যন্ত। বর্তমানে প্রচন্ড জনপ্রিয়তা লাভ করেছে মেলাটি।
শুধু জাপান নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও আলোচিত হচ্ছে কানামারা মাৎসুরি। ২০১৫ সালে ৫ এপ্রিল উৎসবটি আবার পালিত হবে। এ ফেষ্টিভালে আয় হওয়া টাকা এইডস গবেষনার কাজে দান করা হয় , যেহেতু এককালে এখানে যৌনকর্মীরা আসতেন এসটিডি যাতে না হয় সেই প্রার্থনার জন্য।
জাপানের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো এর বৈচিত্র। যেমন, খাদ্যাভ্যাসে কাঁচা থেকে পোড়া, সব ধরণের মাছই রয়েছে মেন্যুতে। তেমনি, সংস্কৃতি চর্চ্চায় প্রচন্ড রক্ষনশীলতার পাশাপাশি রয়েছে অবারিত উন্মোচন। পেনিস ফেস্টিভাল এই রকম অবারিত উন্মোচনের একটি অন্যতম উদাহরণ।