গাজীপুরে মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগে সাদা পোশাকে আইন-শৃংখলা এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
পরিকল্পিতভাবে নাম বিভ্রান্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেও দাবি পরিবারের। এমনকি নিহতের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছিল ১ কোটি টাকা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
নিহত কামাল খান উত্তরায় গার্মেন্টস ব্যবসায় করতেন বলে জানা গেছে। সাত বছরের শিশু এবং স্ত্রীসহ প্রায় নয় মাস ধরে বসবাস করে আসছিলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি বাড়িতে।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে বাসায় ঢুকে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
কামালের স্ত্রী আসমা আক্তার জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও জানা যায়নি কামাল খানের অবস্থান। এর মধ্যেই শুক্রবার একটি ফোনে কামালের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ১ কোটি টাকা। মুক্তিপণের টাকার ব্যবস্থা হতে না হতেই জানা গেল কামাল খান আর বেঁচে নেই।
‘তারা বললো, লোক যদি পাইতে চায় তাহলে এক কোটি টাকা দিতে হইবো। আমরা বললাম, মানুষটার যেনো কোন ক্ষতি না করে। বলেন, যদি একটু কমে হয় তাহলে আমার সবকিছু বেইচা হইলেও আমার মানুষটা বাচামু।’ বলছিলেন আসমা আক্তার।
এদিকে কামাল খান মৃত্যুর পর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মাদক মামলা করে। মামলার এজাহারে, মৃত একজন হলেও দেখানো হয়েছে দুজনের নাম। একজনের পিতার নাম দেওয়া হলেও ঠিকানা দেওয়া হয়েছে অন্য আরেকজনের।
আসমা আক্তার বলেন, ‘মানুষটা আমার স্বামী। আর নামডা অন্য জনের। একবার কি যাচাই করতে পারতো না, কোন মানুষডারে মারতাছি। কে অপরাধী আর কারে মারি। একবারও জানতে চাইলো না, একটু সময়ও নিলো না।’
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ বিষয়ে তাদের কোন ভুল হয়নি।
গাজীপুরের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, ‘আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে তাহলে সেটা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। আর প্রমাণ পেলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কামরুল ইসলামের পরিবারের দাবি, কামরুল ইসলামের মুত্যুর সংবাদ পেয়ে তারা মরদেহ দেখে নিশ্চিত হন এটা কামরুল ইসলাম না কামাল খানের মরদেহ। রবিবারও কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে কামরুলের সাথে দেখা করে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
কামরুলের আত্মীয় কাঞ্চনমালা বলেন, ‘কামরুলের বাবার নাম হচ্ছে, তমিজুদ্দিন শেখ। এমনিতে শুনি তার নামে দশটা না বারোটা মামলা আছে।’
নিহত কামাল খানের সাথে কামরুল ইসলামের কোন সম্পর্ক ছিলো না বলেও জানান তারা। তবে একজন জীবিত ব্যক্তির নাম মৃত হিসেবে ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।