অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে লিস্টেড-ননলিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এটা বর্তমানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। তবে মোবাইল অপারেটর ও তামাক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করপোরেট কর অপরিবর্তিত থাকবে। এবারের বাজেটে ভ্যাটের স্তর হবে পাঁচটি। আর ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার হবে ১৫ শতাংশ। তবে ভ্যাটের এ স্তর ভবিষ্যতে তিনটিই করা হবে। তা করতে আরেকটু সময়ের প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সব বাজেটই হয় জনগণের সন্তুষ্টির জন্য। আগামী বাজেটে ব্যক্তিগত করের আয়সীমাও অপরিবর্তিত থাকবে। গতকাল সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
কর না বাড়লে রাজস্ব বাড়বে কীভাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের রাজস্ব আহরণকারী সংস্থা এনবিআরের লোকজনের মনমানসিকতায় পরিবর্তন হয়েছে। একইসঙ্গে আইনেও জটিলতা কমানো হয়েছে। তাই বেশিসংখ্যক মানুষ আয়কর দিচ্ছে। এ খাত থেকেই রাজস্ব বাড়বে। বাজেটের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়বে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা হবে ১৫-১৬ লাখ। কিন্তু তা ইতিমধ্যে ৩৩ লাখ ছাড়িয়েছে। এটা আগামীর জন্য খুব আশাজাগানিয়া বিষয়। আরও ভালো দিক হচ্ছে, নতুন করদাতাদের অধিকাংশই ইয়াং পিপল (যুবক)। আগে মানুষের মধ্যে আয়কর রিটার্ন ও কর দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের ভীতি কাজ করত। হয়রানি করা হতো রাজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তা এখন অনেক কমে গেছে। ফলে রাজস্ব আদায়ের হারও বেড়েছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, অনেকটা হয়রানি মনে করে অনেকেই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতেন না। কিন্তু এখন এটা আর হয়রানি নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিনন্দন জানাই। কারণ তারা তাদের মনমানসিকতার অনেক পরিবর্তন করেছেন। তা ছাড়া হয়রানি কমানোর জন্য কিছু আইন-কানুনও পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের ২০-২৫ বছরের হিসাব-নিকাশ এখন তিন বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে জনগণ ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ট্যাক্স অফিসের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ২০০ উপজেলা পর্যায়ে ট্যাক্স অফিস রয়েছে। আগামীতে প্রতিটি উপজেলায় ট্যাক্স অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা বাস্তবায়ন করতে হয়তো দু-তিন বছর লাগবে। তিনি বলেন, কোন লেবেল থেকে আয়কর নেওয়া হবে সেটায় তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। গতবারও কোনো পরিবর্তন করিনি। এটা করার কোনো মানেই হয় না। বিভিন্ন দেশে এ বিষয়টি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় না। তাই আমারা একটা স্থায়ী ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছি।
ভ্যাটের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১২ ভ্যাট আইন অনুযায়ী আমাদের কমিটমেন্ট ছিল ভ্যাটের স্তর একটি করা। কিন্তু তা আমরা করতে পারিনি। তবে আমরা আগামী বাজেটে ভ্যাটের স্তর নয়টি থেকে কমিয়ে পাঁচটিতে নামিয়ে আনব। তবে আমাদের মূল টার্গেট হচ্ছে তিন স্তরে নামিয়ে আনা। সর্বোচ্চ, মধ্যম আর সর্বনিম্ন এ তিনটি স্তরই চূড়ান্ত হবে সামনে। ভ্যাটের সর্বোচ্চ হারটা ১৫ শতাংশই থাকবে। নিচেরগুলো পরিবর্তন করা হবে। সেগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাজেটের অন্য ফিগারগুলোও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এতে আরও দু-এক দিন লাগবে। আমার কাছে যেসব ফিগার এ মুহূর্তে রয়েছে এগুলো চূড়ান্ত নয়। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব সব থেকে বেশি হয় ভ্যাটের মাধ্যমে। আগামী বছরে তাই থাকবে আর দ্বিতীয় অবস্থানে আয়করকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আকার এখনো বলা সম্ভব নয়। আরও দু-এক দিন পর এটা চূড়ান্ত হবে। তবে এটা ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে থাকবে। আগামী বাজেটে কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে— এ বিষয়ে তিনি বলেন, এনার্জি খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং কমিশন এ বাজেটেই করা হবে কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০০৪ সালে ব্যাংকিং কমিশন করা হয়েছিল। এরপর আর করা সম্ভব করা হয়নি। আর এবার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা জুনের মধ্যেই করা হবে। তবে বাজেটে একটা রূপরেখা থাকবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তেমন কোনো সুখবর থাকবে না বলে জানান তিনি। বাজেট বাস্তবায়নের নিম্নমুখিতা অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ। এটা অনেক জায়গা থেকেও বলা হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে কীভাবে একে বাড়ানো যায়। এটাই আপনার শেষ বাজেট কিনা—উত্তরে তিনি বলেন, ইয়েস, আমি এটাই বাজেট দিচ্ছি। এরপর অবসরে চলে যাব। তবে দল যদি চায় তাহলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে গতকাল অর্থমন্ত্রীর দফতর থেকে বাজেট প্রস্তাব ২০১৮-১৯ শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘সমৃদ্ধ আগামীর অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ যা ৭ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থাপন করবেন। আগেরবারের মতো এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশনের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেটে ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণের জন্য www.bangladesh.gov.bd, www.nbr-bd.org, www.pIancomm.govt. www. bdpressinform.portal.gov.bd বাজেট ডকুমেন্ট থেকে সরাসরি ডাউনলোড করা যাবে।