নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সৈয়দপুরে যত্রতত্র সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে। বাণিজ্যিক সৈয়দপুর শহর ছাড়াও শহরের উপকণ্ঠে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই।
সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. শামসুল হক সড়কের মেসার্স ডায়মন্ড কনফেকশনারির স্বত্বাধিকারী মো. আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু জানান, বেকারি আমাদের আদি ব্যবসা। আমরা বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসা করে আসছি। তাই আমরা বিএসটিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে সরকারকে সকল প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করি। ফলে আমাদের উত্পাদন খরচ বেশি পড়ছে। আর তাই আমাদের উত্পাদিত সেমাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নেই কোনো অনুমোদন। দিতে হচ্ছে না সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্স। তারা সেমাই তৈরিতে ব্যবহার করছে নিম্নমানের উপাদানসামগ্রী। ফলে তারা যে দামে বিক্রি করুক না কেন তাদের লাভ বেশি টিকছে। কিন্তু আমাদের সারা বছরই ব্যবসা করতে হয়। আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে। যেখানে বসে আমরা সারা বছরই সেমাই ও বেকারি মালামাল বিক্রি করি। আমাদের সেমাই খারাপ হলে ক্রেতারা সরাসরি প্রতিষ্ঠানে এসে অভিযোগ দিতে পারেন। তাই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সেমাই তৈরি করতে পারছি না। আর নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি লাচ্ছা সেমাই কম দামে বিক্রি করেও অধিক মুনাফা লুটছে ওইসব ব্যবসায়ীরা।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ জানান, ভেজাল সেমাই তৈরি হয়ে থাকলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
ঝালকাঠিতে নিম্নমানের ডালডা দিয়ে
নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঈদকে সামনে রেখে ঝালকাঠিতে নোংরা পরিবেশে শ্রমিকদের ঘাম মিশে অত্যন্ত নিম্নমানের পামওয়েল ও ডালডা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেমাই। বাহারি এবং চটকদার রঙিন প্যাকেটে এসব সেমাই প্যাকেটজাত করে দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে। দুই/একটি কারখানা মালিক ছাড়া অধিকাংশেরই নেই বৈধ অনুমোদন। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসব সেমাই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করলেও মালিক পক্ষকে থামানো যাচ্ছে না।
সরেজমিনে জেলার একাধিক সেমাই কারখানায় দেখা গেছে, সামনে তালাবদ্ধ, পিছনে চলছে নোংরা পরিবেশে সেমাই উত্পাদন। মেঝেতে কাদা ও তেলের মাখামাখি। সেমাইয়ের উপর দিয়ে এবং আশপাশে তেলাপোকা ছুটাছুটি করছে। সেমাই তৈরি ও ভাজার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের হাতে নেই গ্লাভস। তাদের শরীরের ঘাম হাত বেয়ে সেমাইতে মিশছে। সেই সেমাই ভাজা হচ্ছে কালো নিম্নমানের পামওয়েল বা ডালডা দিয়ে। আর যেসব ট্রেতে সেমাইর ময়দা মাখা হচ্ছে সেগুলো দুর্ঘন্ধযুক্ত নোংরা। এসব সেমাইয়ের প্যাকেটের গায়ে উত্পাদনের তারিখ হতে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এক বছর লাগিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে এসব নিম্নমানের সেমাই প্যাকেটজাত করার পর এতদিন মেয়াদ থাকবে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি মালিক পক্ষ। এ সময় একাধিক কারখানার শ্রমিক ইমন, কামাল, মফিজ মিয়া, শিশু শ্রমিক মো. সবুজসহ অনেকেই জানায়, মালিকরা আমাদের গ্লাভস দেয়নি।
নূরানী লাচ্ছা সেমাই কারখানার ম্যানেজার সুলতান হোসেন জানান, আমাদের সেমাই ঝালকাঠির বাজার ছাড়াও বরগুনা, পিরোজপুর, কাউখালি, পটুয়াখালী, খেপুপারা, মঠবাড়িয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে। তিনি শ্রমিকদের খালি গায়ে হাত গ্লাভস ছাড়া সেমাই তৈরির বিষয়ে বলেন, আমরা তাদের এসব দিলেও গরম ও তেলের কারণে তারা তা ব্যবহার করতে পারে না। এই কারখানার মালিক মনিরুজ্জামন জানান, আমরা ২০১৬ সালে বিএসটিআইয়ে আবেদন করে ২০১৮ সালে অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু আবেদনের পর থেকেই সেমাই উত্পাদন করছি।
মদিনা লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক নান্নু মিয়া জানান, আমার কারখানার পরিবেশ খুবই ভালো। শ্রমিকরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করে। ম্যাজিস্ট্রেট এসে কারখানার দেয়ালের সঙ্গে মাকড়সার জাল পাওয়ায় জরিমানা করেছেন। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েই সেমাই উত্পাদন করছি।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, ইতোমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিনটি কারখানা মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। যাতে অন্যরা সাবধান হয়ে ভালো পরিবেশে মানসম্মত সেমাই উত্পাদন করে। না করলে আরো অভিযান চালানো হবে।