নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের অর্জুনচর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন তোতা মিয়া তার ৩ বিঘা জমিতে দেশীয় জাতের লটকন চাষ করে আজ স্বাবলম্বী।
গত বছর তিন বিঘা জমির এই বাগান হতে তিনি ৩ লাখ টাকার লটকন এবং প্রায় ৫০ হাজার টাকার লটকন চারা বিক্রি করেছেন। এ বছরও ফলন ভাল হওয়ায় বাগান থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার লটকন বিক্রি হবেন বলে আশা করেন চাষি তোফাজ্জল হোসেন।
লটকন চাষি তোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি ভবঘুরে মানুষের মত ছিলেন। বাড়িতে তেমন কোন কাজ-কর্ম করতেন না। বিয়ে করার পর সংসারের খরচ বেড়ে গেল। পরিবারের খরচ মিটানোর জন্য পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দিন দিন বিক্রি করে শেষ করে ফেলেছিল। একদিন তার লটকন বাগান করার চিন্তা এলো। সেই চিন্তা থেকে সর্বশেষ এই ৩ বিঘা জমিতে আজ হতে ১২ বছর পূর্বে ২০০৬ সালে এলাকার বিভিন্ন বাগান হতে উন্নত জাতের দেশি লটকনের চারা সংগ্রহ করে ১৬০টি চারা দিয়ে লটকন বাগান শুরু করেন। গাছে ফলন না আসার আগ পর্যন্ত পারিবারিক খরচ মিটাতে বুদ্ধি করে লটকন চারার ফাঁকে ফাঁকে পেয়ারার চারা রোপন করেন। পরের বছরই পেয়ারা গাছে ফলন আসায় সেই পেয়ারা বিক্রি করে পারিবারিক খরচ মিটান।
লটকন চারা রোপন করার ৬ বছর পর গাছে ফলন শুরু হয়। প্রথম বছর বাগান হতে মাত্র ৬০০ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারলেও হতাশ না হয়ে জমির পরিচর্যা আরো বাড়িয়ে দেন। যার ফলে পরের বছর লটকনের ফলন বৃদ্ধি পায় জমি থেকে তিনি ৩৫ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করেন। এভাবে প্রতি বছর লটকনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত বছর এ বাগান থেকে ৩ লাখ টাকার অধিক লটকন বিক্রি কছেন।এ বছর মোট ১৯৫ টি গাছে ফলন ভাল হওয়ায় ৫ লক্ষাধিক টাকার লটকন বিক্রির প্রত্যাশা করেন লটকন চাষী। এছাড়াও তিনি চলতি বছর বাগান হতে চারা বিক্রি করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা উপার্জন করেছেন। যেখানে তিনি প্রতিটি লটকন চারা ১০০ হতে ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন।
বাগানের খরচ এবং রোগবালাই সম্পর্কে তিনি বলেন, ৩ বিঘা জমির এ লটকন বাগানে প্রতি বছর ১০-১৫হাজার টাকার বেশি খরচ হয়না। অন্যান্য ফসলে চেয়ে লটকন বাগানে রোগ বালাইয়ের আক্রমনও কম হয়ে থাকে। তবে মাঝে মাঝে কিছু পোকা এবং ভাইরাসের আক্রমন হয় এ জন্য কীটনাশক স্প্রে করলেই চলে। এ ক্ষেত্রে উপজেলার কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করে থাকেন।
সরেজমিন লটকন বাগান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছেই গোড়া থেকে প্রতিটি শাখা প্রশাখা লটকনে পরিপূর্ণ। বাগানের একপাশে রোপনকৃত লটকনের বীচির ছোট ছোট চারা গাছ মাঝ থেকে কেটে স্ত্রী গাছের ছোট ডাল কেটে সংযুক্ত করে কলম দিয়েছেন। আগামী বছর যে চারাগুলো তিনি বাগান থেকেই বিক্রি করতে পারবেন। প্রত্যেক বছর মাঘ এবং ফাল্গুন মাসে বাগানে লটকন আসা শুরু হয় । পরিপক্ক হয়ে লটকন পাকা শুরু হয় জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে।
লটকন চাষী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ বাগানের লটকন আকারে বেশ বড় এবং খেতেও সু স্বাধু হওয়ায় লটকনের চাহিদা রয়েছে বেশ। আর এজন্য লটকন বিক্রি করতে বাজারে নিতে হয়না। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ক্রেতারা গাছে ফলন আসার পরই যোগাযোগ শুরু করে। ফলে বেঁচে যায় পরিবহন খরচ। লটকন বাগানে কম খরচে অধিক লাভ থাকায় স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও লটকন চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। তিনি নিজ ইচ্ছাতে নতুন চাষীদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন, অত্র উপজেলার কিছু এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ লাভজনক ফলটি চাষের ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় সার্বিক সহযোগীতা করে আসছি।