করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাবাবিশ্বে। অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম করোনার নতুন ধরনের স্ট্রেইন ডেল্টা প্লাস। বিভিন্ন দেশে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের নতুন রূপটি এর অন্যান্য ধরনকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে। ধরনটি আগেরটির চেয়ে অধিক সংক্রামক। জ্বর, শুকনা কাশি, স্বাদ–গন্ধ চলে যাওয়া ছাড়াও নতুন করে কিছু লক্ষণ যুক্ত হয়েছে। করোনার এসব লক্ষণের কারণে ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, মানসিক বিভ্রান্তি, গলাব্যথা, পেশিব্যথা, ত্বকে র্যাশ, হাত ও পায়ের আঙুলের রং বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
করোনাভাইরাস প্রাথমিকভাবে শ্বাসনালী এবং ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। এছাড়া নতুন উপসর্গ পাওয়া গেল মানুষের মস্তিষ্কে। করোনাভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রে বহু রকমের সমস্যা সৃষ্টি করে। স্ট্রোক, মানসিক বিকার, প্রলাপ, বিভ্রম, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা সমস্যাগুলো নতুন তালিকায় চলে এসেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে যাদের উপসর্গ তুলনামূলকভাবে মৃদু ছিল – তারাও অনেকে অভিযোগ করছেন যে তারা অনেক কিছু মনে রাখতে পারছেন না, কেউ বা মানসিক অবসাদ বোধ করছেন, অনেকে আবার কোন কিছুতে আগের মতো মন:সংযোগ করতে পারছেন না। করোনার প্রভাবে মস্তিষ্কের কাজে নানা ধরনের গণ্ডগোল দেখা দেয়। এ কথাও চিকিৎসকেরা এত দিন বলছিলেন। কিন্তু হালের গবেষণায় উঠে এল আরও একটি সমস্যার কথা। দেখা যাচ্ছে, করোনার কারণে মস্তিষ্কে তুলনায় বিরল সমস্যাও হচ্ছে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ‘গিলান-বারে সিনড্রম’।
সম্প্রতি আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক’-এর তরফে নতুন একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মস্তিষ্কের উপর করোনার প্রভাব সম্পর্কে এত দিন আমরা যা যা ভেবে এসেছি, আসলে প্রভাব তার চেয়েও বেশি বা আরও জটিল হতে পারে। সে প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে এই ‘গিলান-বারে সিনড্রম’-এর কথা।
‘গিলান-বারে সিনড্রম’এই সমস্যায় শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি মস্তিষ্কের সুস্থ কিছু স্নায়ুকে আক্রমণ করতে শুরু করে। তার প্রভাব পড়ে বিশেষ বিশেষ অঙ্গের উপর। এর ফলে অনেকেই পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারেন। অনেকের শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে রোগীর বড় বিপদও হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, করোনা রোগীদের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ এত বেশি দেখা যাচ্ছে যে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া কী হবে তার অনুসন্ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করা ছাড়াও এখন এটা স্পষ্ট যে এটা মস্তিষ্কেও সমস্যা সৃষ্টি করে। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যাওয়া, তা ছাড়া আছে রক্ত জমাট বাঁধা, এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠার ফলে সৃষ্ট প্রদাহ। তা ছাড়া আমাদের এ প্রশ্নটাও করতে হবে যে করোনাভাইরাসটি নিজেই মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে কিনা।
সূত্র : ঢাকাটাইমস