মন্ত্রীত্বের চেয়ে নেতৃত্বে আগ্রহী যারা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এই সংগঠনকে তার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। সংগঠনকে গড়ে তোলার জন্য তিনি সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আর এই সংগঠনকে চালানোর জন্য তিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি বড় উদাহরণ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগে অধিকাংশ নেতাই দলের নেতৃত্বের চেয়ে মন্ত্রীত্বে বেশি আগ্রহী এবং যেকোন মূল্যে মন্ত্রী হওয়াই যেন এখন অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটি বড় প্রাপ্তির বিষয়। কিন্তু এর মধ্যেও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আছেন যারা মন্ত্রীত্বের চেয়ে নেতৃত্বেই বেশি আগ্রহী। বঙ্গবন্ধুর সেই রাজনৈতিক দর্শনকে তারা হৃদয়ে ধারণ করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন,

১. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের লীগের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে তিনি শুধুমাত্র এমপি ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০১৮ এর নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের একজন নিষ্ঠাবান এবং কর্মঠ নেতা হিসেবে ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কর্মীদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিমন্ত্রী থাকলেও প্রতিমন্ত্রী অবস্থায় তিনি যতটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিষয়ে মনোযোগ দিতেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক এখন এমপি নন, মন্ত্রী নন কিন্তু দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন যে, মন্ত্রীত্বের চেয়ে নেতৃত্বই তার জন্য পাথেয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের পূর্ণতা পেয়েছেন বলেও মনে করেন।

২. মির্জা আজম: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা আজম। ২০১৪ মেয়াদে তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সে সময় মন্ত্রী হিসেবে তিনি উজ্জ্বল ছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। কিন্তু মির্জা আজমও মন্ত্রীত্বের চেয়ে সংগঠনের নেতা হওয়াটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বেশি তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

৩. এনামুল হক শামীম: এনামুল হক শামীম বর্তমান মন্ত্রিসভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু উপমন্ত্রীর চেয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই কাজ করতে তিনি বেশি আগ্রহী বলে জানা গেছে।

৪. খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমান মন্ত্রিসভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর আগে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং অনেকেই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে মনে করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে। আর তিনিও আওয়ামী লীগে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি গৌরব অনুভব করেন।

৫. মহিবুল হাসান চৌধুরী: মহিবুল হাসান চৌধুরী বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। গত কমিটিতে তিনিও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরী নিজেকে একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করেন, মন্ত্রী হিসেবে নয় এবং তিনিও মন্ত্রীত্বের চেয়ে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।