ঈদের পরে হেফাজতের দুর্বার আন্দোলন!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতের ব্যানারে জামায়াত, বিএনপি ও নষ্ট বামেরা তাণ্ডবের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের চেষ্টার চালায়। সেই অপরাধে ভিডিও ফুটেজ দেখে সারা দেশে তাণ্ডবকারীদের গ্রেফতার চলছে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের অনেকেই আটক হয়েছে। যারা প্রকাশ্যে বা পেছন থেকে যারা তাণ্ডবে ইন্ধন দিয়ে সারা দেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে তাদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণে সারা দেশে তাণ্ডবকারীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। তবুও রেহায় পাচ্ছে না, আটক হচ্ছে র্যাব পুলিশের পাতা ফাঁদে। সরকার বলছে যে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই গ্রেফতার অভিযান চলবে।

আতঙ্ক শুধু সন্ত্রাসীদের মাঝেই বিরাজ করছে তা নয়, মিডিয়ার কল্যাণে তৈরি কিছু স্বাধীনতা বিরোধী শিবিরের বুদ্ধিজীবীদের মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁরা এতদিন প্রচার করেছিলেন যে, সরকারের আস্কারা পেয়ে হেফাজত এটা করছে, ওটা করছে, ইত্যাদি। এটা যে সরকারের আস্কারা নয় তা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীগণ এখন বুঝতে পেরেছেন। এতেই তাঁদের রক্ত হিম শীতল হয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এখন আর তাঁদের চাপাবাজি চলবে না।

প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবরে জানা যায়, সরকার কওমি মাদ্রাসায় পড়া দেশের বিরাট জনশক্তিকে আধা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সরকারের ইচ্ছা ছিল কয়েক বছরের মধ্য পর্যায়ক্রমে কওমি মাদ্রাসার কারিকুলাম মিনিমাম জাতীয় মানের বা পারলে আন্তর্জাতিক মানের করতে। যেমনটি আছে আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। আমাদের দেশে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়ার মাধ্যম ইংরেজি। অন্যদিকে মাদ্রাসার লেখাপড়ার মাধ্যম হচ্ছে আরবি ও উর্দু। এদের উপর “Appreciative Inquiry (AI)” এর কৌশল ব্যবহার করে মুল ধারার শিক্ষার তুল্য করে গড়ে তোলা ছিল সরকারের পরিকল্পনা। তা নাহলে কওমি মাদ্রাসাগুলো পুরো সরকারি করেও কোন লাভ হবে না। দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী / জনসম্পদ শিক্ষিত হয়েও দেশ ও সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে। যদিও এদের মাঝে এখনো কিছু ব্যতিক্রমী মেধা আছে। ব্যতিক্রম তো উদাহরণ নয়। কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের মূল ধারার সমকক্ষ করতেই সরকার, বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব আগ্রহী। কিন্তু কিছু অতি বাম বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন মিডিয়ায় সরকারের এই মহতী উদ্যোগের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেশের জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছেন, সরকারের ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।

হেফাজতের উচ্চ পর্যায়ের কিছু নেতা সরকারের এই সদিচ্ছার কথাটা জানেন, যদিও তাঁরা হেফাজতের মূল কমিটিতে এখন সংখ্যালঘু। তাই এই তাণ্ডবের প্রকাশ্য নেতৃত্ব দিয়েছে স্বাধীনতার পরে পাকিস্তান থেকে আলেম হয়ে আসা বাবুনগরী আর রাজাকার পুত্র মামুনুল হক যাদের বিরুদ্ধে আল্লামা শফি হুজুরের হত্যার অভিযোগ আছে। সাথে ছিল কিছু জামায়াত, বিএনপি নষ্ট বাম নেতাদের চেষ্টা যাতের তাঁরা সবাই মিলে অবৈধ উপায়ে সরকার পরিবর্তন, ক্ষমতা ও নারী লিপ্সায় বিভোর ছিল। তাই এদের কাছে ভালোরা পরাজিত হয়েছেন। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের বিরাট অংশকে যে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাঠে নামানো হয়েছিলো তার প্রমাণ এখন মিলছে। শিক্ষকদের একটা বড় অংশ এই তাণ্ডবের পক্ষে ছিলেন না, তা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।

হেফাজতের আমির বাবুনগরী দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতের কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেবার জন্য সরকারের কাছে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। তার দাবি না মানলে সরকার বিরোধী দুর্বার আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিল হেফাজতের আমির বাবুনগরী। কিন্তু সরকার সেই দাবি গ্রাহ্য করেন নি। উল্টা ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে সন্ত্রাসীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। বাংলা ইনসাইডার সূত্রে বলা হয় যে, বাবুনগরী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আপোষের জন্য যোগাযোগ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। শেখ হাসিনার সরকার যদি হেফাজতের প্রতি দুর্বল বা নমনীয় থাকতো তাহলে ভাস্কর্য ইস্যুর মত একটা আপোষ-রফা করে নিতো।

অন্যদিকে হেফাজতের আমির সারাদেশের তাঁদের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে আন্দোলনে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে খবরে জানা গেছে। হয়তো তারা জামায়াত-বিএনপি জোটের মত ঈদের পরে দুর্বার আন্দোলনে নামবেন। দেখা যাক ঈদের পরে (কোন ঈদ তা জানা নেই) কেমন দুর্বার আন্দোলনে নামে হেফাজতের কর্মীরা।