হ’ঠাৎ সংঘাত, র’ক্তপাত, নানা প্রশ্ন

শুরুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সমর্থকরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরো’ধিতা করে আসছিলেন। ছোট-খাটো কিছু বিক্ষোভও করে আসছিলেন তারা। একপর্যায়ে আ’ইনশৃ’ঙ্খলা র’ক্ষাবা’হিনীর পক্ষ থেকে বঙ্গব’ন্ধুর জ’ন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের বিশেষ অনুষ্ঠানকালে কোন ধ’রনের রাজনৈতিক ক’র্মসূচি না দিতে বলা হয়। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ক’ঠোর হুঁশিয়ারি। তবে হুঁশিয়ারি দিয়েই থেমে থাকেনি সংগঠনটি। সরাসরি অ্যাকশনে নেমে যান ছাত্রলীগের নেতাক’র্মী রা। ২৩শে মা’র্চ টিএসসিতে বাম সংগঠনগুলোর মোদি বিরো’ধী সমাবেশে হা’মলা হয়।

হা’মলা হয় পরেও। এসব হা’মলা য় আক্রা’ন্ত হন সাংবাদিকরাও। এরইমধ্যে মতিঝিলে নূরুল হকের নুরের সমর্থকদের স’ঙ্গে সংঘ’র্ষ হয় পু’লিশের। হেফাজতে ইসলাম মোদির সফরের প্রতিবাদ করলেও কোন ধ’রনের ক’র্মসূচি না দেয়ার কথা জা’নায়। এতে ধারণা করা হয়েছিল- প’রিস্থিতি শান্তই থাকবে। কিন্তু প’রিস্থিতি চূড়ান্ত খা’রাপের দিকে যায় শুক্রবার জুমা’র নামাজে’র পরপর। বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমা শেষে হেফাজত সমর্থক এবং একদল মুসল্লি মিছিল বের করার চেষ্টা করেন। সেখানে আগে থেকে অব’স্থান নেয়া যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা তাদের ওপর হা’মলা চালায়।

এসময় সরকারি দলের সমর্থকরা মসজিদের বাইরে এবং হেফাজত সমর্থকরা ভেতরে অব’স্থান নেন। অ্যাকশনে নামে পু’লিশও। প্রায় তিন ঘণ্টা ধ’রে সংঘাত চলতে থাকে। সরকার সমর্থকদের অনেককে এসময় হ্যালমেট পরা অব’স্থায় দেখা যায়। বায়তুল মোকাররমের এ সংঘাত ছ’ড়িয়ে প’ড়ে হেফাজত হেডকোয়ার্টার হিসেবে পরিচিত হাটহাজারীতে। সেখানে পু’লিশের গু’লিতে নি’হত হন চারজন। একইদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মা’রা যান একজন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অ’ন্তত আট জন নি’হত হয়েছেন। এর জে’রে শহরজুড়ে চালানো হয়েছে তা’ণ্ডব। হা’মলা হয়েছে সরকারি অফিস, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনায়।

প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের স্বল্পসংখ্যক মানুষের উপ’স্থিতির প্রতিবাদে হা’মলা ও সংঘাত তৈরি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলোর বিক্ষোভে দ’ফায় দ’ফায় হা’মলা র যৌক্তিকতা কি? এসব হা’মলা র আগে যেভাবে হু’মকি দেয়া হয়েছে তা কি শোভন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হা’মলা র শি’কার হয়েছেন সাংবাদিকরা। পরে হেফাজতের ক’র্মী রাও সাংবাদিকদের ওপর হা’মলা চালায়। এসব হা’মলা য় কোন মা’মলা হয়নি, গ্রেপ্তার হননি কেউ। সাংবাদিকদের ওপর হা’মলা কে এ দেশে কি দায়মু’ক্তি দেয়া হয়েছে?

দ্বিতীয়ত, সব র’ক্তপাতের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বায়তুল মোকাররমে সংঘাতে ঘ’টনা। নানা সূত্র এটা নি’শ্চিত করেছে, পরিকল্পিতভাবেই সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাক’র্মী রা সেদিন আগে থেকেই বায়তুল মোকাররমে অব’স্থান নেন। তাদের অনেকে সেখানে জুমা’র নামাজও আদায় করেন। পরে দ্রুতই মোদিবিরো’ধী মিছিল প্র’তিরো’ধে নেমে প’ড়েন। এটা কতুটুকু প্রয়োজন ছিল সে প্রশ্ন সরকারি দলের ভেতরেও ওঠেছে।

তৃতীয়ত, হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কী প্রেক্ষাপটে গু’লি হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। শুরুর দিকে সংঘাত এড়ানোর সুযোগ খোঁজা হয়েছিল কি না তার উত্তর খুঁজছেন অনেকে।

সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি আলোচনা হচ্ছে, নেতানেত্রীদের সফরের প্রতিবাদ দুনিয়াতে নতুন কিছু নয়। পরাক্রমশালী সদ্য প্রাক্তন মা’র্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সফরের প্রতিবাদে জার্মানি, ভারতসহ অনেক দেশেই বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি মোদির বি’রুদ্ধে ভারতেও বিক্ষোভ হয় প্রায়ই। বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদির সফরের কোন প্রতিবাদই করা যাবে না এ নীতি কেন নেয়া হয়েছিল তা পর্যালোচনার দা’বি রাখে। সামান্য প্রতিবাদ বিক্ষোভে সফর ম্লান হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। অথচ হার্ডলাইনের কারণে এতোগুলো প্রা’ণ ঝরে গেলো। আখেরে কারোই লাভ হলো না। ক্ষ’তি হলো তাদের যারা তাদের প্রিয়জন হারালেন।