‘খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা অনেক সাহসী ছিলেন’

সদ্য প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু রাজনীতিবিদদের চেয়ে তিনি আলোচিত ছিলেন গবেষণাধ’র্মী রাজনৈতিক লেখনীর জন্য। তার প্রত্যেকটি গ্রন্থ বাংলাদেশের রাজনীতির একটি করে অনন্য দলিল বলে বিবেচিত হয়। একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তাঁর গ্রন্থে পরিবেশিত তথ্যের ব্যাপারে ছিলেন সৎ। এবং এজন্যই তিনি প্রশংসিত ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি যত কথাই বলুক না কেন, বই লেখার সময় তিনি নির্মোহ থাকতেন এবং সত্য অন্বেষণের চেষ্টা ক’রতেন।

তার একটি অন্যতম আলোচিত গ্রন্থের নাম হলো ‘বাংলাদেশ: এ স্টাডি অফ দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস’ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে প্র’কাশিত এই গ্রন্থটিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ স্বী’কার ক’রেছেন বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা সিদ্ধা’ন্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাহসী ছিলেন। এই বইয়ের ৪৮ এবং ৪৯ পৃষ্ঠায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষ’মতায় আসার পরের প’রিস্থিতি বর্ণনা করেছিলেন এভাবে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তাঁর গ্রন্থে বলেন যে, নতুন সরকার এমন বেশ কিছু সাহসী পদক্ষে’প নিয়েছিল যেটি পূর্বের বেগম খালেদা জিয়ার সরকার নিতে ব্য’র্থ হয়েছিল।

গ্রন্থে তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যেই রুলস অব বিজনেস পরিবর্তন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ক্যাবিনেট মিটিংয়ে মন্ত্রীদেরকে মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। এর ফলে সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি ক’রতে বাধ্য হয়। আগে এই মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষ’মতা ছিল সচিবদের হাতে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার এই গ্রন্থে আরো বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি সংশোধন করেন। সংশোধন করে পার্লামেন্টের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতে যেখানে মন্ত্রীরা প্রধান থাকতেন তা পরিবর্তন করে এমপিদের স্থায়ী কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেন।

যার ফলে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সংসদের কাছে জবাবদিহি ক’রতে বাধ্য হন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেন, যার মাধ্যমে তিনি পার্লামেন্টে জবাবদিহিতা নি’শ্চিত করেন। বিরো’ধী দলের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে আরো বেশি জবাবদিহিতার পটভূমি তৈরি করেন শেখ হাসিনা। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার গ্রন্থে এটাও বলেছেন যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই অসাধারণ কিছু সাফল্য অর্জন করেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার গ্রন্থে লি’খেছেন যে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ৩০ বছরের যে পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব, তার অবসান ঘ’টে। আরেকটি সমভাবে গু’রুত্ব পূর্ণ বিষয় ছিল পার্বত্য শান্তিচুক্তি। ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে এটি স্বাক্ষর করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। এর ফলে পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার ক্ষেত্রে গু’রুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পা’লন করে। যদিও বিরো’ধী দল এই দুটি চুক্তির স’মালোচনা করেছে কিন্তু দেশে-বিদেশে এই চুক্তি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চি’হ্নিত হয়ে আ’সছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আওয়ামী লীগের শাসনকালকে বিশ্লেষণ ক’রতে গিয়ে বলেন যে, সরকার কৃষির দিকে নজর দেয় এবং চার বছর বাম্পার ফলন হয়। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংস’ম্পূর্ণ করেন শেখ হাসিনা।

ঐ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, সরকারের উদ্যো’গেই হোক আর আবহাওয়ার কারণেই হোক, বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ২৮ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। যা বাংলাদেশকে এক স্বস্তিদায়ক অবস্থাযনে নিয়ে গেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের ঐ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, বিরো’ধী দলের স’মালোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ জিডিপির প্রবৃ’দ্ধি ৬ দশমিক ৪ ভাগে উন্নীত করে, যা অত্যন্ত আশাপ্রদ এবং মুদ্রাস্ফীতির হারও তিনি কমিয়ে আনেন। আর এই সমস্ত সাফল্যের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে একটি শক্ত ভিত দিতে সক্ষম হয়।