৩০ বছরেও বদলায়নি তার ভাগ্য

অভাবের সংসারে বৃদ্ধ মা আর স্ট্রোক করা স্ত্রীর কথা ভেবে রাত পোহালেই করাত-কুড়াল হাতে ছুটতে হয় কাজের সন্ধানে…….

একসময় গাছের গাড়ি লোড করতেন। ৬-৭ বছর গাড়ি লোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯২ সালে এক

দুর্ঘটনায় মো. আবুল কালাম নামে এক শ্রমিক মা;রা যান। সহকর্মীর মৃ;ত্যুর পর জীবনের ঝুঁকির কথা ভেবে গাড়ি লোডের বন্ধ করে দেন মোসলেম উদ্দিন।

এরপর অন্যের জমিতে কাজ করেছেন অনেক বছর। কৃষি শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন কৃষি জমিতে কাজ করা ও ফলদ গাছ লাগানোসহ কোদাল হাতে মাটি কাটার কাজও করেছেন তিনি।

শ্রমজীবী হিসেবে নানামুখী কাজের পর ১০ বছরেরও বেশি সময় করাত-কুড়াল হাতে গাছ কাটার কাজ করছেন খাগড়াছড়ির দিনমজুর মো. মোসলেম উদ্দিন। গত তিন দশক ধরে দিনমজুর হিসেবে একাধিকবার কাজের ধরন বদলালেও

বদলায়নি তার অর্থনৈতিক অবস্থা। এজন্য বৃদ্ধ মা ও অসুস্থ স্ত্রীসহ তিন সদস্যের সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খান মোসলেম উদ্দিন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়ার বাসিন্দা মো. শফিকুর রহমান ছিলেন পেশায় গৃহনির্মাণ শ্রমিক। গৃহনির্মাণ শ্রমিক (ছৈয়াল) হিসেবে এলাকায় খুব নাম-ডাক ছিল তার। ছৈয়াল মো.

শফিকুর রহমান-আম্বিয়া খাতুন দম্পতির একমাত্র ছেলে মো. মোসলেম উদ্দিন। চার কন্যা সন্তানের জনক দিনমজুর মো. মোসলেম উদ্দিন চৌদ্দগ্রামের ফাতেমা বেগমের সঙ্গে ঘর বাঁধেন ১৯৮২ সালে।

চার কন্যা সন্তানের জনক জননী মোসলেম-ফাতেমা দম্পতি। দিনমজুরির টাকা দিয়ে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এজন্য কারও কাছে হাত পাতেননি। মেয়েরা স্বামীর ঘরে সুখে থাকলেও অভাব তাড়িয়ে বেড়ায় মোসলেম উদ্দিনকে।

দিনমজুর মোসলেম উদ্দিন বলেন, একসময় অন্যের কৃষি জমি ও ফলদ বাগানে কাজ করেছি। গাছের গাড়ি লোডের কাজও করেছি। গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের গাছ কাটি।

সে গাছ ধোলাই করি। একসময় মজুরি ২০০-৩০০ টাকা পেলেও এখন প্রতিদিন ৫০০ টাকা পাই। উর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে কোনো রকম সংসার চলে।

দিনমজুরি আর এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকায় কেনা ২০ শতক টিলা ভূমি ছাড়া কোনো সম্পদ নেই মোসলেম উদ্দিনের। ঘরে নেই কোনো পুত্রসন্তান; যে জীবনের শেষ বয়সে পরিবারের হাল ধরবে।

তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে যখন কাজ বন্ধ থাকে তখন অর্থ সঙ্কটে পরিবারেও চরম দুর্যোগ নামে। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি দেয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ে।

তিন দশকের বেশি সময় দিনমজুরের কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শরীর আর যেন ফেরে উঠছে না। অসুস্থতা বাসা বেঁধেছে শরীরজুড়ে। তবুও অভাবের সংসারে বৃদ্ধ মা আর স্ট্রোক করা স্ত্রীর কথা ভেবে রাত পোহালেই করাত-কুড়াল হাতে ছুটতে হয় কাজের সন্ধানে।

গোমতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জোত ব্যবসায়ী মো. মোসলেম মিয়া বলেন, একজন শ্রমিক বা দিনমজুর কাজের প্রতি কতটা আন্তরিক হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত মোসলেম উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে আমার গাছ কাটে। কখনও কাজে ফাঁকি দিতে দেখিনি।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন বলেন, দিনমজুর মোসলেম উদ্দিন নিরীহ

মানুষ। পঞ্চাশোর্ধ্ব দিনমজুর এই বয়সেও প্রচুর পরিশ্রম করেন। কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তার জীবনে কোনো উন্নতি আসেনি। তার অভাব-অনটনের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময়ে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও সরকারি সহায়তা দেয়া হবে।