পুঁজিবাজারে ৭ সরকারি প্রতিষ্ঠান শিগগিরই: অর্থমন্ত্রী

সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলনে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৩৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা (৪২৫ কোটি মার্কিন ডলার) সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার, বিশ্বব্যাংক দেবে ২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ও জাইকা দেবে ২২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তবে জাইকার অর্থায়ন সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে আসবে।

রোববার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুব শিগগির লাভজনক ৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দু’মাস সময় দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনে তার দফতরে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সদ্যসমাপ্ত বিডিএফ সম্মেলনে আমাদের কিছু অর্জন আছে। সম্মেলনে উপস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল। সম্মেলনে নতুন কিছু আসছে যা আমাদের কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত করতে হবে।

তবে বিডিএফ বৈঠকে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল থেকে বাংলাদেশ ফান্ড দাবি করেছিল। সেখানে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। আগামী ৪ বছরে পর্যায়ক্রমে এ ফান্ড দেয়া হবে বাংলাদেশকে। দাতা সংস্থা এ তহবিল দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা নিয়ে আজ (রোববার) বৈঠক হয়েছে। সেখানে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটডে (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল) ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব কোম্পানির ব্যালেন্স শিট নিরূপণ করতে ২ মাস সময় দেয়া হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো তাদের পুনর্মূল্যায়ন করে শেয়ার মূল্য নির্ধারণ করবে। এরপর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ার নিয়ে আসবে। আমি মনে করি বিশ্বের অন্য দেশের মতো দেশের পুঁজিবাজার আরও সম্প্রসারণ দরকার। এজন্য সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য তিনটি প্রকল্প চলমান আছে।

বিশ্বব্যাংকের কাছে বলা হয়েছে, এখন শুধু রোহিঙ্গাদের সহায়তা করলে ওই অঞ্চলের মানুষের অবনতি হবে। কারণ রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের জীবনযাপন, পরিবেশ, অবকাঠামোসহ নানা ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক এক্ষেত্রে ৩৫ কোটি মার্কিন বা ২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে এ অর্থ। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সহায়তা বাবদ দেয়া হবে ১৫ কোটি ডলার, গরিব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ১০ কোটি ডলার ও রোহিঙ্গা সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে মাল্টি প্রজেক্টের আওতায় দেয়া হবে ১০ কোটি ডলার।

তবে প্রকল্পের অর্থের ৬০ শতাংশ ব্যয় করা হবে স্থানীয় জনগণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ক্ষতি মোকাবেলায় এবং বাকি ৪০ শতাংশ যাবে রোহিঙ্গাদের পেছনে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিডিএফ বৈঠকে দাতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে ২৭০ কোটি মার্কিন বা ২২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে এ টাকা ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে চারটি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে, বাকি ২টি নেয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা নয়, তাদের ফেরত দেয়া হবে এমন বক্তব্যের পর নতুন করে অর্থ নেয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখনও সেই অবস্থানেই আছি। তাদের সহায়তার জন্য টাকা নয়, ফেরত দেয়ার পক্ষে আমরা। কিন্তু রাতারাতি তাদের ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। আমরা সব ধরনের আলোচনা করছি। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারে রায় পেয়েছি। ফেরত দিতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্যই এ অর্থ ব্যয় করা হবে।