টনসিলের ব্যাথা- টনসিলাইটিস বা টনসিলে প্রদাহ আমাদের অনেকেরই একটি কমন সমস্যা। এই একটু অনিয়ম করে খাচ্ছেন বা ঠাণ্ডা-গরম লাগাচ্ছেন, আর অমনি গলা ফুলে ব্যথায় টনসিল শুরু হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণত স্ট্রেপট্রোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টনসিলাইটিস হয়। আরও কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও হতে পারে এটি। এর ফলে টনসিলের লালভাব, গলাব্যথা, গলার মধ্যে আলসার, কানে ব্যথা, ঘাড়ে ফোলাভাব, জ্বর ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এ থেকে নিরাময়ের অনেকগুলো উপায় আপনার হাতেই রয়েছে।
লবণ পানি
গলাব্যথা শুরু হলে সামান্য উষ্ণ লবণ পানি দিয়ে কুলি করার বিষয়টি মোটামুটি সবাই জানি। এটি টনসিল সংক্রামণ রোধ করে, ব্যথাও বেশ দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও উষ্ণ লবণ পানি দিয়ে কুলি করলে গলায় সব ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণের আশঙ্কাও কমায়।
সবুজ চা এবং মধু
টনসিল কমাতে এক কাপ গরম পানিতে আধা চামচ সবুজ চা পাতা আর এক চামচ মধু দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে সেটি খান। সবুজ চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় সবরকম ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে। দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ এই মধু-চা পানে উপকার পাবেন।
হলুদ মেশানো দুধ
এক কাপ গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন। গরুর দুধ টনসিলের ব্যথা উপশমে কাজে লাগে। কারণ দুধে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান আছে। গরুর দুধে হলুদ মিশিয়ে সামান্য গরম করে খেলেও উপকার মেলে। হলুদ অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরী, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান বলে গলাব্যথা কমিয়ে টনসিলের সংক্রমণ দূর করে।
আদা চা
টনসিল দূর করতে দেড় কাপ পানিতে এক চামচ আদা কুচি আর চা ১০ মিনিট ফুটান। দিনে অন্তত ২-৩ বার এটি পান করুন। আদার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যেকোনো সংক্রমণ ছড়াতে বাধা দেয়। তাই গলার ব্যথা কমায়।
লেবুর রস
২০০ মিলিগ্রাম উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ মধু, আধা চামচ লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। গলাব্যথা ভালো না হওয়া পর্যন্ত এটি খেতে থাকুন। টনসিলের সম্যসা দূর করার জন্য এটি খুবই কার্যকরী।
নিম
নিম তো সব ধরনের রোগের জন্য দারুণ জাদুকরী পথ্য। এজন্য প্রথমে কয়েক চিমটি নিম পাউডার পানিতে গুলিয়ে ফুটিয়ে নিন। এতে খানিকটা লবণও মেশাতে পারেন। ঠাণ্ডা হলে সেই পানি খান, এবং নিয়মিত এটা খেলে টনসিল থেকে আপনি নিরাময় পাবেন।
দারুচিনি
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমিয়ে টনসিল সারাতে চাইলে অবশ্যই খাবেন দারুচিনি। এজন্য এক গ্লাস গরম পানিতে দারুচিনি গুড়ো ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিনে কয়েকবার খান। টনসিল সেরে যাবে।
তুলসী
ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা কমাতে তুলসীর কোনো বিকল্প হয় না। কারণ এতেও রয়েছে অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এগুলো টনসিল সারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এজন্য কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খেয়ে নিন। চাইলে এতে কিছুটা মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।
ব্রেইন টিউমার হলে যেভাবে বুঝবেন…
প্রাণঘাতী যে কয়টা রোগের নাম শুনলে আমরা রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে যাই, তার মধ্যে ব্রেন টিউমার একটি। গবেষণা বলছে পৃথিবীর মাত্র ১ শতাংশেরও কম মানুষ ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হন।
তারপরেও ভয় এটাই যে, ব্রেন টিউমার থেকে ব্রেন ক্যানসারের মতো রোগের সৃষ্টি হয়। তাই আপনার কিছু পরিবর্তন খেয়াল করুন। যাতে করে টিউমার রোগটি থেকে আপনি দূরে থাকতে পারেন।
মাথাব্যথা
ব্রেইন টিউমার হলে অবশ্যই তীব্র মাথাব্যথা হবে। আর সমস্যা হলো এই মাথাব্যথা সহজে ছাড়তে চায় না। দেখা যাবে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায় মাঝে মাঝে। না জেনে বুঝে ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া একদমই উচিৎ নয়। আর ওষুধে কোনো লাভ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে।
দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
ব্রেন টিউমার হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যায় । এই লক্ষণটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে বাইটেম্পোরাল হেমিয়ানোপসিয়া। প্রথম দিকে চোখে ঝাপসা ভাব হতে শুরু করে। এরপরে আস্তে আস্তে চোখেও ব্যথা শুরু হতে পারে। ফলে এদিকওদিক ধাক্কা খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
দুর্বলতা এবং আলস্য ভর করে
ব্রেন টিউমার হলে যে শুধু মাথাতেই ব্যথা হয়, তাই নয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেও ব্যথা হতে পারে। এর ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও হাত-পায়ে দুর্বলতাসহ এসব অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হতে পারে। কোনো কাজে মন বসতে চাইবে না। ফলে আলস্য চলে আসে।
গুছিয়ে কথা বলতে না পারা
ব্রেন টিউমার হলে কথার মধ্যে একটা জড়তা দেখা যায়। কথা গুছিয়ে বলতে না পারা, তোতলানো, কোনোকিছুর নাম মনে রাখতে না পারা, বা অন্য মানুষ কী বলছে সেটা বুঝতে না পারা- এই লক্ষণগুলো হলে ভাবুন আপনার ব্রেন টিউমার হতেই পারে।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়
প্রায়ই মনমরা হয়ে থাকা, রাগ এবং দুশ্চিন্তায় ডুবে যাওয়া অনেকেরই হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি আগে সুস্থ থাকেন, হঠাৎ করেই এই সমস্যাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে তাহলে সাবধান। কেননা টিউমার ছড়াতে লাগলে নার্ভের ওপর চরম মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না।
কানে তালা লাগা
যদি আপনি কানের এক পাশ থেকে শুনতে না পান অথবা ক্রমাগত কানে তালা লাগছে এরকম টের পান তাহলে বুঝতে হবে আপনার টিনিটাস হয়েছে। এটি ব্রেন টিউমারের অন্যতম একটি লক্ষণ।
শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
আপনার হাঁটতে যদি অসুবিধা হয়, বিশেষত অন্ধকারে এবং আপনি হাটার সময় একপাশে কাত হয়ে হাঁটেন, তাহলে আপনার মস্তিস্কের সেরেবেলাম অংশে টিউমার হতে পারে।