শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সুপার ফুড ‘ওমেগা থ্রি’

ছোট্ট নিশাদের বয়স মাত্র তিন। ছুটোছুটি, হইচই করে সারাদিন মাতিয়ে রাখে বাড়ি। বাবা-মা দুজনেই চাকরি করেন। ছোট্ট নিশাদকে সামলাতে হিমশিম খান বটে, কিন্তু বিষয়টি উপভোগ্যও। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিশাদের অতিরিক্ত জেদ, চঞ্চলতা নজর এড়াতো না বাবা-মায়ের। পড়াশোনার বেলায়ও কেমন অমনোযোগ। একদিন বিষয়টি নিয়ে চিকিত্সক ও পুস্টিবিদ বন্ধুর সাথে কথা বলেন নিশাদের বাবা। তিনি পরামর্শ দিলেন শিশুটির খাবারে একটু বাড়তি কিছু যোগের কথা। জানালেন, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) বা শিশুর অতিরিক্ত চঞ্চলতা এবং অমনোযোগিতা রোধে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবারের উপকারিতা।

নিশাদের বাবার পুষ্টিবিদ বন্ধু আরও জানালেন মাছের উপকারিতার কথা। শিশুরা সাধারণত মাছ পছন্দ করে না। কিন্তু মাছকেই বলা হয় সুপার ফুড। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছকে। এসব মাছে ওমেগা থ্রি এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা শিশুদের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা, সার্ডেন ইত্যাদি মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে। চিকিত্সক ও পুষ্টিবিদের বক্তব্য, যত বেশি ওমেগা থ্রি মস্তিষ্ক পাবে তত বেশি শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।

রাতে নিশাদের বাবা-মাও ইন্টারনেট ঘাঁটলেন এ বিষয়ে। নিউরো ফিকোফারমাকোলজির এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইয়াহু হেলথ জানায়, দেহে পরিমিত ওমেগা থ্রি গ্রহণের নানা প্রয়োজনীয়তার কথা। শিশুর ঠিকভাবে বেড়ে ওঠায় যা অবশ্যগ্রহণীয়। এই ওমেগা থ্রি মেলে ফ্যাটি এসিডযুক্ত নানা খাবার যেমন ডিম, ডাল, সবজি ও সামুদ্রিক মাছের তেলে। এছাড়া সয়াবিন ও ক্যানোলার তেল, বাদামি বা হলুদ রঙের তৈলবীজেও পাওয়া যায় অতি প্রয়োজনীয় এই ফ্যাটি এসিড।

মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার সাইকিয়াট্রি ও পেডিয়াট্রিক বিভাগের অধ্যাপক রাসেল বার্কলির বরাত দিয়ে ইয়াহু হেলথ লিখেছে, ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কে স্নায়ুর সংকেত আদান-প্রদানের কাজেও সহায়তা করে। আর ওমেগা-৩ গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের গঠনের জন্য। নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার উটরেক্টে পোস্ট ডক্টরাল গবেষক দিয়েংক বসের মতে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার খায় না, তাদের তুলনায় যারা এই খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করে তাদের অমনোযোগিতার সমস্যা অনেকটাই কম।

বিষয়টি নিয়ে নিশাদের মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন বাবা। মায়েরও সায়, কারণ তিনি মনে করতে পারেন ছোটবেলায় বেশি করে মাছের তেল খেতে বলা হতো শিশুদের। একটু ইন্টারনেটে ঘাঁটতেই দেখা যায় এর কারণ। মাছের তেলে ওমেগা থ্রি থাকে। আর মানসিক বিকাশের জন্য ওমেগা থ্রি খুবই উপকারী। অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও যদি খাবারে ওমেগা থ্রিয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন, তাহলে তা হবু সন্তানদের জন্য উপকারী।

ইন্টারনেট সার্চে বের হয় আমাদের দেশে ওমেগা-৩ যুক্ত খাদ্যের উত্সও। জানা যায়, উদ্ভিজ্জ তেল যেমন—তিসির তেল ও ক্যানোলা অয়েল ইত্যাদিতে পাওয়া যায় ওমেগা-৩। যা আমাদের দেশে তেমন ব্যবহূত হয় না। এদিকে সয়াবিন তেলে ওমেগা-৬-এর পরিমাণ বেশি থাকায় এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করতে হবে।

সামুদ্রিক মাছের তেল ওমেগা-৩-এর উত্কৃষ্ট উত্স। এছাড়া গবেষণায় পাওয়া গেছে, দেশীয় মাছের মধ্যে রুই মাছ, পাঙ্গাস, মাগুর ইত্যাদি মাছের তেলে পাওয়া যাবে ওমেগা-৩। এতে ওমেগা-৩ ও ৬-এর ভারসাম্য সঠিক মাত্রায় রয়েছে। মাছের ডিমে ক্ষতিকর চর্বির সঙ্গে বেশ ভালো পরিমাণে থাকে ওমেগা-৩। ১ চামচ মাছের ডিমে প্রায় ৩৪২ মিলিগ্রাম পরিমাণ ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের বাদামে আছে ওমেগা-৩। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি বাদামে। শাকসবজি যেমন—পালং শাক, ব্রক্কোলি, ওয়ালনাট ইত্যাদিতে যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে।

তবে সবকিছুর পরিমিত মাত্রা যেমন ভালো তেমনি দেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় এই খাদ্য উপাদানও সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করতে হয়। দিনে ৩ গ্রামের বেশি ওমেগা-৩ গ্রহণ স্ট্রোকের মতো ভয়ংকর রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।