শখের বসে পাখি পালতে অনেককেই দেখা যায়। তাদের কেউ পালেন বাসার বারান্দায়, কেউ বা ঘরে, আবার কেউ পালেন বাড়ির ছাদে। তবে শখ থেকে পাখি পালন শুরু করে তা থেকে আর্থিক সাফল্য অর্জন পর্যন্ত পথটা এতটাও সহজ নয়। এর প্রতিটি মোড়ে থাকে অপরিসীম ধৈর্য, ইচ্ছাশক্তি, যত্ন আর অটুট আত্মবিশ্বাস। তেমনি শখ থেকে শুরু করে সফল একজন পাখি পালক শেখ এহসান আহমেদ। ঢাকার মিরপুরের ডেলটা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
২০০৯ সালের শেষের দিকে একান্ত শখের বশেই শুরু করেছিলেন পাখি পালন। সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া এহসান আহমেদ নিজের জমানো এবং বাসা থেকে কিছু টাকা নিয়ে কিনেছিলেন একজোড়া বাজরিগার আর একটি খাঁচা। সেই থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে যত্নের সাথে বাড়িয়েছেন পরিসর। বাজরিগারের সাথে পেলেছেন ককাটেল, সানকুনুর, ইন্ডিয়ান রিংনেক, জাভা, লাভবার্ডসহ নানা পাখি। বর্তমানে এহসান আহমেদের সংগ্রহে আছে প্রায় আড়াইশো জোড়া পাখি। ২০১১ সাল থেকে যুক্ত আছেন এভিকালচার সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাথে।
এহসান আহমেদ বলেন, ‘পাখি পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য। এছাড়া পরিবারের সাহায্য এবং নিজের ইচ্ছাশক্তি অনেকাংশে সাহায্য করে। তবে পাখি পালন করার জন্য সবার আগে পাখিকে চিনতে হবে, ওদের সময় দিতে হবে, তাদের চাহিদা বুঝতে হবে, জানতে হবে তাদের অভ্যাস সম্পর্কে।’
তার মতে, পাখি পালন অনেকভাবেই মানুষকে লাভবান করে। অলস সময় কাটানোর সবথেকে ভালো উপায় হতে পারে এটি। এছাড়া আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় একটা পর্যায়ে গিয়ে। প্রতি মাসে গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি উপার্জনের পথ রয়েছে এতে। তবে যারা পাখি পালতে চান কিংবা পাখির প্রজননকে কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চান তাদের জন্য বাজরিগার পালন থেকে শুরু করার পরামর্শ থাকল এই তরুণ পাখি পালকের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে এহসান আহমেদ পাখি পালনের সাথে জড়িত থাকলেও তার ছোটভাই শেখ সাঈদ আহমেদ পালছেন অ্যাকুরিয়াম ফিস। ২০১২ সালে শখের বসেই বাসায় একটি অ্যাকুরিয়াম আনেন। পালতে শুরু করেন গাপ্পি, প্লাটি, নিয়ন টেট্রাসহ বিভিন্ন মাছ। তবে এর কিছুদিন পর থেকেই বাসার ছাদে দুটি ফিসপন্ড তৈরি করেন। এবার শুরু করেন ছোট জাতের লাল চিংড়ি পালন। চিংড়ি ছাড়াও বর্তমানে তার সংগ্রহে আছে বেটা, গাপ্পি, প্লাটি, মলিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসইর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘মাছ পালার ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। তবে অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালার পর থেকে আমি চাইতাম ওদের একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ দিতে, যেখানে ওরা আরো ভালোভাবে থাকতে পারবে। এই চিন্তা থেকেই আসলে ছাদে ফিসপন্ড করা।’
সাঈদ আহমেদ বর্তমানে আর ফিসপন্ড দুটিতেই ছোট জাতের চিংড়ি পালন এবং প্রজনন করে থাকেন। শখ হলেও চিংড়ি পালন ও প্রজননের মাধ্যমেই মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন সম্ভব বলে জানান তিনি। নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্টের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন। চিংড়ি পালন ও প্রজননকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবেই দেখেন তিনি।