ডিমে আগ্রহ কমবেশি সবার। বয়স্ক যারা, তারা মনে করেনÑ ডিম না খাওয়াই ভালো। ডিম মানেই কোলেস্টেরল, বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিস অথবা হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। ডিম কি আসলেই বিপজ্জনক কোনো খাবার অথবা একজন সুস্থ মানুষ কিংবা যারা হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা ঝুঁকিতে আছেন, তারা সপ্তাহে কয়টা ডিম নিরাপদে খেতে পারবেন? ডিমে আসলে কি আছে? ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুমে আছে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল। একটি বড় সাইজের ডিমে ৫.৩ গ্রাম ফ্যাট (পূর্ণবয়স্কদের দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম) ও ১৮০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল (পূর্ণবয়স্কদের দৈনিক চাহিদা ৩০০ মিলিগ্রাম) থাকে। দেহের প্রতিটি কোষ, এনজাইম, হরমোন ইত্যাদি গঠনে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট হলো এক অপরিহার্য উপাদান। যৌন হরমোন, যেমনÑ এস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন ছাড়াও জীবন রক্ষাকারী কর্টিসোল হরমোন তৈরিতেও কোলেস্টেরল এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। অর্থাৎ কোলেস্টেরল ছাড়া জীবন অসম্ভব।
ভিটামিন-সি ছাড়া আর সব ভিটামিন ডিমে বিদ্যমান। ভিটামিন-এ, ডি, ই, সেলেনিয়াম ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয় যায় ডিমে। ভিটামিন-এ চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং ভিটামিন-ডি হাড্ডি সতেজ রাখে। এ ছাড়া সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ডি এবং ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্ষয়রোধ করতেও সাহায্য করে। ডিমের সাদা অংশে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রোটিন বা এমাইনো অ্যাসিড (মোট ২১টি) বিদ্যমান। এর মধ্যে ৯টি এসেনসিয়াল অর্থাৎ দেহের ভেতরে প্রোটিন বা আমিষ থেকে উক্ত ৯টি এমাইনো অ্যাসিড তৈরি হয় না। বিধায় অবশ্যই খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। তাই ডিমকে বলা যায় একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন। মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদিও সম্পূর্ণ প্রোটিন। পুরো হরমোন বা এনজাইম এবং কোষ গঠনে এমাইনো অ্যাসিড অত্যাবশ্যকীয়। এমাইনো অ্যাসিড শরীরে মাত্র কয়েক ঘণ্টা মজুদ থাকতে পারে। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন একটি ডিম নিরাপদে খেতে পারেন। তাতে দেহের কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। আবার যারা ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের পক্ষেও সপ্তাহে ৩ বা ৪টি ডিম খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। ডিমে ভয় কিছুটা আছে বটে, তবে স্বস্তিই বেশি।