নারীরা কেন বেশি দিন বাঁচে?

বিশ্বজুড়ে পুরুষদের চেয়ে নারীদের গড় আয়ু বেশি। এর পেছনে কারণ কি? বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পেয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক জেনি রেগান বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা মাছির ওপর গবেষণা করছেন এবং দেখেছেন মাছির কাছে হয়তো এর প্রশ্নের একটি জবাব পাওয়া যেতে পারে।
“বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা করতে গেলে, খুব গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনি খেয়াল করবেন যে, নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি বাঁচে। এরপর আমরা যখন আয়ু বাড়ানোর জন্য কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ শুরু করলা, তখনও দেখলাম যে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণের ফলে নারীদের আয়ু বাড়ছে ঠিক, কিন্তু পুরুষদের ওপর তার কোন প্রভাবই পড়ছে না।”
ড. রেগান এবং তার দল এই গবেষণার জন্য বেঁছে নিয়েছেন মাছিকে। হ্যা, মাছি। এবং তারা এই গবেষণায় সাহায্য নিয়েছেন লিঙ্গ পরিবর্তনের। তবে পুরো মাছির লিঙ্গ পরিবর্তন নয়, কিছু কোষ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে।
ড্রসোফিলা বা মাছিজাতীয় গোত্রের প্রাণীদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের শরীরের প্রতিটি কোষের নির্দিষ্ট লিঙ্গ আছে। এরই সুযোগ নিয়ে গবেষকরা পুরুষ মাছির শরীরে তৈরি করেছেন নারী মাছির কোষ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ এবং দেখার চেষ্টা করেছেন, এর মাধ্যমে পুরুষ মাছির আয়ুর ওপর কোন প্রভাব পড়ে কিনা।
“আমরা লিভারের লিঙ্গ পরিবর্তন করেছি, রক্তের করেছি, মস্তিষ্ক করেছি এবং শেষপর্যন্ত আমরা পরিপাকতন্ত্র করেছি। যখনি আমরা পুরুষ পাকস্থলী পরিবর্তন করে সেটা স্ত্রী লিঙ্গ করলাম এবং তাকে নির্দিষ্ট ডায়েট বা খাদ্যপ্রণালী অনুযায়ী খাওয়ানো শুরু করলাম, আমরা দেখলাম যে ঐ পুরুষ মাছির আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে”।
ড. রেগানের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, পরিপাকতন্ত্র নারীদের দীর্ঘায়ু পাবার পেছনে একটি বড় কারণ। কিন্তু তারা আরেকটি বিষয় এই গবেষণায় লক্ষ্য করেছেন যে বয়সের সাথে সাথে নারীদের তুলনায় পুরুষদের পাকস্থলী বরং ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। সেখানে নারীদের পাকস্থলীতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু ছোট ছোট ক্ষত তৈরি হয় এবং কখনো কখনো টিউমারও দেখা যায়।
কিন্তু তারপরও নারীদের শরীরে এমন কি আছে যেকারণে তাদের পাকস্থলীর দীর্ঘায়ু লাভের জন্য সহায়তা করে?
“নারীরা যেহেতু ডিম উৎপাদন করে, যেমন কোন কোন স্ত্রী প্রাণী জীবনের প্রথম অংশে দিনে কয়েক’শ ডিম পাগে। যেকারণে একই খাদ্য থেকে পুরুষের চেয়ে তাদের বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারীরা ডিম উৎপাদনের প্রয়োজনে তাদের পাকস্থলী অনেক বড় করতে পারে। যেহেতু তাদের পাকস্থলী এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, তাই তাদের পাকস্থলীতে সক্রিয় স্টেম সেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং তারা যেকোন ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু পুরুষরা সেটি পারে না”।