লিচু কেন খাবেন?

লিচু একটি নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফল। এটি রসালো। এর ব্যাস সাধারণত ১-১.৫ ইঞ্চি। গাছ ১০-৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সব স্থানেই লিচু হয়, তবে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে এর ভাল ফলন হয়। এই এলাকার মঙ্গলবাড়িয়া লিচু বড় আকার ও সুস্বাদের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়।লিচু হলো সেপিন্ডাসিয়া পরিবারের লিচি গণের একমাত্র সদস্য। এটি নিরক্ষীয় ও উপ-নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। এর আদি নিবাস চীনে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল সহ বিশ্বের কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তিয় বহু দেশে লিচু চাষ করা হয়।

লিচু খেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ বাজারে সুমিষ্ট লিচু আসতে আরম্ভ করেছে ইতিমধ্যেই, খুব বেশিদিন পাওয়াও যাবে না৷ তাই মাসখানেকের মধ্যে যতটা পারেন উপভোগ করে নিন৷ তবে খুব বেশি লিচু খাবেন না, দিনে ১০-১২টির বেশি খেলে হজমের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরাও একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন৷ লিচু কিন্তু রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দিতে সক্ষম, তাই খালি পেটে না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়৷

লিচুর স্বাদ মিষ্টি বলে অনেকেই এই ফলটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করেন, বিশেষ করে যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ লিচুতে প্রচুর ফাইবার থাকে, তা রাফেজের জোগান দেয় শরীরে, হজমের পক্ষেও অত্যন্ত সহায়ক৷ তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় পাবেন না, নিশ্চিন্তে লিচু খান৷ বিশেষ করে খাওয়ার পর যাঁদের একটু মিষ্টি ছাড়া চলে না, তাঁরা ডেজ়ার্ট হিসেবে লিচু খেতে পারেন৷ স্ন্যাক্স হিসেবেও গোটা দশেক লিচু খেলে দেখবেন খিদের বোধ আপনাকে মোটেও বিব্রত করছে না আর৷ লিচু দিয়ে শরবত তৈরি করলে খেতে খুব ভালো লাগে, লিচুর পায়েসও স্বর্গীয় স্বাদের হয়৷ সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, যেহেতু ফলটা নিজেই মিষ্টি, তাই খুব বেশি চিনি না দিলেও খেতে ভালো লাগে৷

কীভাবে তৈরি করবেন লিচুর শরবত: ৮-১০টি বীজ ছাড়িয়ে নেওয়া আস্ত পাকা লিচু, এক কাপ জল, এক চাচামচ ভরা চিনি, এক চাচামচ লেবুর রস (প্রয়োজন না থাকলে দেবেন না)

পদ্ধতি: মিক্সিতে প্রথম তিনটি উপকরণ দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন৷ ছাঁকবেন না, তা হলে পুরো ফাইবারটাই বেরিয়ে যাবে৷ খাওয়ার সময় যদি মনে হয় যে স্বাদটা একটু টক হলে ভালো হত, তা হলে লেবুর রসটা মিশিয়ে নেবেন৷ গোটা চেরি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন৷

কীভাবে তৈরি করবেন লিচুর পায়েস: ১০-১২টি বীজ ছাড়িয়ে নেওয়া পাকা লিচু, এক লিটার মাঠাসমেত দুধ, স্বাদ অনুযায়ী চিনি

পদ্ধতি: দুধটা জ্বাল দিতে আরম্ভ করুন৷ মাঠাসমেত দুধের নিজস্ব কিছু গুণ আছে, স্বাদেও তা লো ফ্যাটের চেয়ে ভালো, তাই মাঝে-মধ্যে খেলে কোনও ক্ষতি হয় না৷ দুধটা কিন্তু ক্রমাগত নাড়তে হবে, না হলে নিচে লেগে যাবে৷ লালচে হয়ে এলে এক চিমটে ছোট এলাচের গুঁড়ো আর চিনিটা যোগ করে দিন৷ ঘন হয়ে অর্ধেক হলে নামিয়ে নিন৷ লিচুগুলোকে লম্বা লম্বা করে কুচিয়ে নিয়ে এই ক্ষীরের মধ্যে মিশিয়ে দিন নামানোর পরে৷ দুধ ফুটন্ত অবস্থায় লিচু দেবেন না, তা কেটে যেতে পারে৷ একেবারে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন৷ দুধের গরমেই লিচুর কাঁচাভাবটা কেটে যাবে৷ চাইলে উপর থেকে একটু খোয়া ক্ষীর ছড়িয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন৷