সারাদেশের মতো পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ওপর দিয়েও বয়ে চলেছে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে পাহাড়ী জনজীবনে। বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনের অর্ধেকে গিয়ে সূর্যের দেখা মিললেও কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামসহ জেলা সদরের এলাকাগুলো।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শীতের প্রভাবে প্রায় বিপর্যস্ত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির সাধারণ মানুষের জনজীবন। বিশেষ করে বিভিন্ন উপজেলা ও পাহাড়ি গ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে জেলা সদরের বাজারগুলোতে বিক্রি করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। ঘন কুয়াশার কারণে যারা কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া করেন তাদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জেলা সদর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় যেসব ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করতে কুয়াশার কারণে যাত্রাপথে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌযান চালকরা।
রাঙামাটি থেকে লংগদু উপজেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এম.এল কবীর লঞ্চের চালক ইসমাইল বলেন, সকাল ৭টায় আমাদের প্রথম লঞ্চটি রাঙামাটি থেকে ছেড়ে যায়। কিন্তু তখন সূর্য উঠে না আর চারপাশে প্রচুর কুয়াশা থাকে। তাই আমাদের পথ দেখতে কষ্ট হয়। কারণ সকালে জেলেরা মাছ ধরার জন্য হ্রদে জাল ফেলে। কিন্তু দেখা না যাওয়ার কারণে অনেক সময় লঞ্চ জালের উপর দিয়ে গেলে জাল ছিড়ে যায়। তাছাড়া কুয়াশার কারণে ছোট নৌকাগুলোও দেখা যায় না। আমরা লাগাতার হর্ণ বাজিয়ে চলাচল করছি।
রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম থেকে সবজি নিয়ে শহরের বনরুপা বাজারে বিক্রি করতে এসেছেন সুশোভন দেওয়ান। তিনি বলেন, বনরুপা বাজার সকাল সকাল শুরু হয়। তাই আমাদের ভোরের আলো ফোটার আগেই বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে বোট নিয়ে আসতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।
তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের উপর। শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে, ধ্বস নেমেছে ক্ষুদ্র দোকানীদের ব্যবসায়। শহরের শহীদ মিনার এলাকায় বাদাম বিক্রি করতে আসা ইউসুফ আলী বলেন, যখন থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে তখন থেকেই আমাদের ব্যবসা খুব খারাপ। কারণ বিকেল হতে হতেই শীত বাড়তে থাকে, তাই কেউ আর বাইরে থাকতে চায় না। একই কথা বলেন ষাটোর্ধ্ব পিঠা বিক্রেতা আজগর মিয়া। তিনি বলেন, যদিও আমি শীতের খাবার পিঠা বিক্রি করি, কিন্তু শীতের কারণেই এখন ব্যবসা একেবারে ঠান্ডা। শীত বেশি বলে মানুষ এখন এদিকে কম আসে আর আমাদের ব্যবসাও কম হয়।
তবে শীতের কারণে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে বিদেশি ব্র্যান্ডের পুরাতন শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে। ফুটপাত এবং অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানে শীতের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতাদেরও আগ্রহ রয়েছে কমদামী এই শীতবস্ত্রগুলোতে।
পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানদার আবু তাহের বলেন, গত শুক্রবার থেকে বেশ ভালোই শীত পড়েছে। তাই বর্তমানে আমাদের বেচা বিক্রিও বেশ ভালো। পুরাতন জ্যাকেট আর সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি কম্বল ও ব্ল্যানকেটও ভালোই চলছে।
রাঙামাটি জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাঙামাটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাঙামাটি আবহাওয়া কার্যালয়ের সিনিয়র অবজারভার ক্য চিনু মারমা জানান, সারাদেশের মত রাঙামাটিতেও খুব ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ভেতরে আছে এবং আগামী কয়েকদিনও তাপমাত্রা এমনই থাকবে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।