যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা যাবে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) পৃথকভাবে এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছিল শিক্ষার দুই অধিদপ্তর। কিন্তু এর পরদিন বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দেশের অন্তত চারটি জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা ছিল।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এদিকে তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বুধবার দেশের মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, বরিশালের কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও এসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি।
তবে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে এবং তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে সেখানে স্থানীয় শিক্ষা অফিস প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে এমনটা বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল স্পষ্ট বলা হয়েছে কোন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে। যেসব জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকার পরও বন্ধ রাখা হয়নি তা স্থানীয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আসেনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. উত্তম কুমার দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে কোন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকবে তা স্পষ্ট করা হয়েছে। যেসব জেলায় ১০ ডিগ্রি ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে সেসব জেলা ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসার সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে স্কুল বন্ধ করার পরিস্থিতি এখনও হয়নি বলে আমি মনে করি।
এদিন সকালে রাজধানীর তিনটি স্কুল সরেজমিনে পরিদর্শন করে উপস্থিতি কমেনি বলেও জানান ড. উত্তম কুমার দাস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকে ঘন কুয়াশা দেখা যায়। এর আগে মঙ্গলবারও শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তারা বিদ্যালয় বন্ধের কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, সকালে প্রচণ্ড শীত থাকে। এ অবস্থায় স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। তাছাড়া ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়ে কথা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপ বর্ধন বলেন, শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে জেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন নাহার পারভিন ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যালয় বন্ধের কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান।
মেহেরপুর জেলায় গত একসপ্তাহ ধরে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়াতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এদিন দুপুর পৌনে তিনটা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বিদ্যালয়গামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও পড়েছে বিপাকে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও বন্ধ হয়নি মেহেরপুরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এমনকি চলেছে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও।
মেহেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিন বলেন, সকালে মোবাইল অ্যাপসে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম দেখতে পাওয়ায় বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসকের অবহিত করি। জেলা প্রশাসকের পরামর্শে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়। তবে কিছু জায়গায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে, সেক্ষেত্রে বেলা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি সাপেক্ষে দেরিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টা ও ৯টার সময় মেহেরপুর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বিচারে এটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গতকাল মঙ্গলবার বলেছিল, যেসব জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হবে।
আবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিদ্যালয়-২) মোহাম্মদ কবির উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে কোনো জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রির নিচে নামে, সেক্ষেত্রে সেই জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।