বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার ৭

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনার জেরে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে ৫০-৬০ জন বিএনপি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এ ঘটনায় বিএনপির ৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ রোববার সকালে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য বিএনপি নেতা–কর্মীরা যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এতে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ঘটনায় দিনভর বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সংঘর্ষে চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়াসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

বিএনপি বলছে, ফাঁকা গুলি নয়, নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ১৫-২০টি রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। পরে ৭ নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে।

আটক নেতা-কর্মীরা হলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইমাম হাসান আবু চাঁন, দুর্গাপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আতাউর রহমান ফরিদ, দুর্গাপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক রুক্কু, গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামল মিয়া, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য মইনুল হাসান মাহি, আরমান হোসেন ও আরিফুল।

এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সম্রাট গণি বলেন, ‘দুর্গাপুরে ১৫-২০ বছর ধরে শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া অর্পণের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করে আসছি। এর অংশ হিসেবে রোববার সকালে কাচারি মোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে আমাদের কয়েক শত নেতা-কর্মী অবস্থান করেন। আমরা নির্দিষ্ট সময়ে বের হলে রাস্তায় পুলিশ কর্মকর্তা সুভাশীষ এসে ব্যানার ও ফুলের তোড়া নিয়ে শহীদ মিনারে যেতে বাধা দেন।’

সম্রাট গণি বলেন, ‘কোনো স্লোগান দেওয়া যাবে না। তখন আমরা ফিরে আসছিলাম। থানার সামনের রাস্তা দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে পেছন দিক থেকে যুবদলের আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক রুক্কুকে লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয় পুলিশ। তাঁকেসহ বিএনপি নেতা ঈমাম হাসান আবুচান, আতাউর রহমান ফরিদ ও শাহআলম শ্যামলকে ধরে নিয়ে যায়। পরে দিনভর নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ ও আরও কয়েকজন নেতাকে আটক করে।’

সম্রাট গণি আরও বলেন, ‘এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে প্রথমে আমাদের ব্যানার নিয়ে টানাটানি ও কাগজ ছোড়াছুড়ি হয়। পরে যুবদলের পক্ষ থেকে স্লোগান দিতে থাকি। একপর্যায়ে পুলিশ কমপক্ষে ১৫-২০টা রাবার বুলেট ছোড়ে। তখন আমরাও ঢিল দিই। মোবাইলে ভিডিও করার সময় আমাদের ৭-৮টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। এ ছাড়া মসজিদের বাউন্ডারির ভেতরে নেতা-কর্মীদের রাখা প্রায় ৩০০ মোটরসাইকেল নিখোঁজ। কিন্তু পুলিশ বলছে তারা ৩০-৪০টার মতো মোটরসাইকেল নিয়েছে। আমার ডান হাঁটুতে বুলেট লেগেছে। ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শিশিরের মাথায় গুলি লাগাসহ প্রায় ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। পরে আবু চান চেয়ারম্যানের বাড়ি এসে দলীয় লোকজনদের খুঁজতে থাকে পুলিশ। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে পুরো বাড়ি তছনছ করে। পুলিশ বাড়ির বাথরুমের কমোডও ভেঙেছে। সেখান থেকে ড্রাইভার আরিফ এবং স্মরণীকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মইনুল ইসলাম মাহি ও আরমানকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল আলম ভুইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকালে শহীদ মিনারে যাওয়ার প্রাক্কালে পুলিশ আমাদের নেতা–কর্মীদের বাধা দেয়। এ সময় অন্যান্য নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ তর্কবিতর্কে জড়িয়ে গিয়ে আমাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে, আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। বিএনপি নেতা ঈমাম হাসান আবুচান, আতাউর রহমান ফরিদ, আবু সিদ্দিক রুক্কু ও শাহআলম শ্যামলকে ধরে নিয়ে যায়। পরে আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ।’

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান সন্ধ্যায় বলেন, সকালে বিএনপির লোকজন শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসার সময় দুর্গাপুর পৌরসভার কাচারি মোড় এলাকায় পৌঁছার পরে পুলিশকে দেখে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিশ গালিগালাজের কারণ জিজ্ঞেস করলে তখন বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঠেলা-ধাক্কা দেওয়া শুরু করে ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের সতর্ক করে লাঠিপেটা ও চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। পরে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে এ ঘটনায় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। অবিলম্বে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।