অভিনয় শুরু করেছিলেন বহু বছর আগে। কিন্তু বলিউডে পা রাখার পর নিজের নামের চেয়ে ‘খল্লাস গার্ল’ নামেই বেশি পরিচিতি পেতে শুরু করেন ইশা কোপিকর।
এক দশক একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে অভিনেত্রীকে নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি।
১৯৭৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে জন্ম ইশার। বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মাহিমে থাকতেন অভিনেত্রী। ছোট থেকেই মডেলিংয়ের শখ ছিল তার। মুম্বাইয়ের একটি কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর এক আলোকচিত্রীর সঙ্গে ফটোশুটের কাজ করেছিলেন তিনি।
মডেল হিসাবে ফটোশুট করেই জীবন নতুন মোড় আসে ইশার। বিভিন্ন জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব আসতে থাকে তার কাছে। বিজ্ঞাপনের কাজ করার পাশাপাশি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সেখানে বিজয়ীও হয়েছিলেন ইশা।
মডেলিং জগতে নামডাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় ইশার। ১৯৯৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। শাহরুখ সুলতান পরিচালিত ‘এক থা দিল এক থি ধড়কন’ ছবিতে কাজ করেছিলেন ইশা। কিন্তু এই ছবি আদতে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল কি না, তা নিয়ে বলিপাড়ার একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তবে, ইশা তার কেরিয়ার শুরু করেছিলেন দক্ষিণী ফিল্মজগতের হাত ধরে। ১৯৯৭ সালে একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ইশা। তারপর একের পর এক তামিল, কন্নড় এবং মরাঠি ছবিতে কাজ করতে দেখা গিয়েছে তাকে।
কিন্তু ইশার বরাবরের ইচ্ছা ছিল হিন্দি ছবিতে কাজ করার। ২০০০ সাল থেকে তিনি হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ খুঁজলেও পাশাপাশি দক্ষিণী ছবিতেও কাজ করে যাচ্ছিলেন।
খালিদ মহম্মদ পরিচালিত ‘ফিজা’ ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ইশাকে। জয়া বচ্চন, হৃতিক রোশন এবং কারিশ্মা কাপূরের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কোম্পানি’ ছবির গান ‘খল্লাস’ এবং ‘খাকি’ ছবির ‘ইশক সমুন্দর’ গানের দৃশ্যে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ইশা। তার পর ‘কয়ামত: সিটি আন্ডার থ্রেট’, ‘ডরনা মনা হ্যায়’, কৃষ্ণা কটেজ’, ‘ডন’, ‘এক বিবাহ… অ্যায়সা ভি’র মতো ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
কিন্তু ইশার অভিনয়ের চেয়ে বেশি চর্চায় ছিল তার সঙ্গে বলিউড অভিনেতা ইন্দ্র কুমারের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক। নব্বইয়ের দশকে হিন্দি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেত ইন্দ্রকে। কিন্তু ক্যারিয়ার তৈরি করার সময় কোমরে গুরুতর চোট পান তিনি। সেই কারণে কাজের সুযোগও পাচ্ছিলেন না।
ছবিতে বিশেষ কাজ পাচ্ছিলেন না ইন্দ্র। এর পর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০৩ সালে সোনাল রাজু কারিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ইন্দ্র। বিয়ে করলেও সংসারে মন টিকিয়ে রাখতে পারেননি অভিনেতা। ইন্দ্র এবং সোনালের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঢুকে পড়ে ইশা।
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ান্টেড’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ইন্দ্র। এই ছবিতে সালমান খানের ভাইয়ের চরিত্রে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল তাকে। ছবিটি ভালো ব্যবসাও করে। ইন্দ্র তার সঙ্গে ইশার সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলেন। কিন্তু সেই সময় ইশার মন অন্য দিকে বাঁক নেয়।
হোটেল ব্যবসায়ী টিমি নরংয়ের সঙ্গে আলাপ হয় ইশার। শোনা যায়, প্রীতি জ়িন্তাই নাকি টিমির সঙ্গে ইশার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। দু’জনের আলাপচারিতার পর ধীরে ধীরে একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন তারা। সম্পর্কে জড়ানোর পর টিমিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইশা।
২০০৯ সালে টিমির সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন ইশা। ওই একই বছর কমলজিৎ কউর নামে এক উঠতি অভিনেত্রীকে বিয়ে করেন ইন্দ্র। কিন্তু দু’মাস একসঙ্গে থাকার পর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
অন্য দিকে বিয়ের পর ইশার কাছেও কাজের প্রস্তাব আসা কমে যায়। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ইশা জানান, কাজ পাওয়ার জন্য নাকি বলিউড অভিনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়। সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি।
২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন ইশা। কিন্তু ছবির অভিনেতা নাকি তাকে কুপ্রস্তাব দেন।
এক সাক্ষাৎকারে ইশা বলেন, এক বলিউড অভিনেতা আমার সঙ্গে একা দেখা করতে চাইছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি যেন নগ্ন হয়ে তার সামনে যাই। তা হলেই ছবিতে ভালো কাজ পাব আমি। কিন্তু অভিনেতার প্রস্তাবে আমি রাজি হয়নি।
ইশা আরও দাবি করেন, বলিপাড়ার এক প্রযোজকও আমায় বলেছিলেন, কাজ পেতে হলে অভিনেতাদের সুনজরে থাকতে হয়।’
তার উত্তরে ইশা জানিয়েছিলেন যে, তার অভিনয়ের মাধ্যমে যদি পরিচিতি না গড়ে ওঠে, তবে তিনি আর অন্য কোনও উপায়ে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠতে চান না।
২০০৪ সালে ‘গার্লফ্রেন্ড’ ছবিতে অমৃতা অরোরার সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় ইশাকে। সমকামী সম্পর্কের উপর তৈরি হওয়া এই ছবিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এমনকি, কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে এই ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়।
বর্তমানে বলিউড থেকে দূরে সরে এসেছেন ইশা। হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুযোগ না পেলেও বিভিন্ন দক্ষিণী ছবি এবং ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করার প্রস্তাব পান তিনি। বিজেপিতেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।