হজ খরচ কমার আভাস, বাড়তে পারে সময়

হজ নিবন্ধনের বর্ধিত সময়ও শেষ হচ্ছে আজ। প্রতিবছর হজ নিবন্ধনের সুযোগ পেতে হজগমনেচ্ছুরা নানামুখী তৎপরতা চালালেও এ বছর এক লাফে লক্ষাধিক টাকা খরচ বাড়ায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের হজ নিবন্ধনের কোটা পূরণ হয়নি। এখনো নিবন্ধন বাকি ২২ হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খরচ বাড়ায় এই অনিহা মুসল্লিদের।

সব মিলিয়ে হজের খরচ বৃদ্ধি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে কয়েকদিন ধরে। বিষয়টি গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। সরকারের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরাও বিষয়টি মাথায় নিয়েছেন। সব মিলিয়ে হজের খরচ কমানোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে কোটা পূরণে আরেক দফায় সময় বৃদ্ধি করা হতে পারে। এদিকে হজের খরচ বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জিন্নাতুল বাকিয়া, তাহমিনা বেগম ও রত্না আহমেদ অংশ নেন।

অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত হজ প্যাকেজকে অমানবিক উল্লেখ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে খরচ বৃদ্ধির ব্যাখ্যা চেয়েছে উচ্চ আদালত। ব্যাখ্যায় ধর্ম মন্ত্রণালয় বলেছে, ডলারের দাম, বিমান ভাড়া, বাসা ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি পাওয়ায় হজ প্যাকেজের খরচ বাড়ানো হয়েছে। তবে এ ব্যাখ্যা শোনার পর আদালত হজের খরচ কমানোর জন্য উদ্যোগ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

হাইকোর্টের গত মঙ্গলবারের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল আদালতে এ ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে শুনানির পর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

অ্যটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেন, হজে যেতে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আপনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। খরচের খরচ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিন।

অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, হজের যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, এটা সরকারের পলিসি ডিসিশন। এই বিষয়ে আদালত আদেশ দিতে পারেন না। তখন আদালত বলেন, এটার সঙ্গে জনস্বার্থ জড়িত। তাই এ বিষয়ে রিট শুনতে বাধা নেই। পরে আদালত এই রিট আবেদনের শুনানি মুলতবি করেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমন্বয় করে হজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। হজে যেতে বাংলাদেশ অংশে যে ব্যয় হয়, তার পরিমাণ আড়াই লাখ টাকা। আর সৌদি অংশের ব্যয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ফলে সৌদি অংশে যে ব্যয় হয়, সেখানে সরকারের কিছু করার থাকে না। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই সমন্বয় করতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশ অংশে যে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বিমান ভাড়া বেড়েছে, ডলারের মূল্য বেড়েছে, আবার সৌদি আরবের বাসা ভাড়া ও মুয়াল্লিম ফিও বেড়েছে। এর আগে এ বিষয়ে শুনানিতে গত মঙ্গলবার চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা প্রায় ৭ লাখ টাকার হজ প্যাকেজকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

এদিকে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। সেই হিসাব ধরা হলে এখন নিবন্ধন শেষ করে ভিসা প্রক্রিয়া শুরুর কথা। কিন্তু এবছর বারবার সময় বাড়িয়েও পাওয়া যাচ্ছে না হজযাত্রী। বরং নিবন্ধিতদের কেউ কেউ নিবন্ধন বাতিল করে টাকা তুলে নিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো বলছে, এবার অতিরিক্ত ব্যয় ধরার কারণেই ইচ্ছে থাকার পরও হজে যেতে মানুষের আগ্রহ কম। সূত্র মতে, এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯৩ হাজার ৬৫ জন নিবন্ধন করেছেন। কোটা পূরণ হতে এখনো বাকি ৩৪ হাজার ১৩৩ জন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) নিবন্ধনের সময় শেষ হচ্ছে।

সৌদি আরবের নির্ধারণ করা কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বরাবরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারিভাবে আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর একদিন পর ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। চলতি বছর হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। এই সময়ের মধ্যে কোটার বিপরীতে কমসংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হওয়ায় ফের ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপরও কোটার অর্ধেক যাত্রী নিবন্ধন না করায় ফের ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়।

সবশেষ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হচ্ছে না। এতবার সময় বাড়ানোর পরেও কোটা পূরণ করা যায়নি। বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত ব্যালটি, নন-ব্যালটি মিলিয়ে নিবন্ধন করেছে মাত্র ৯৩ হাজার ৬৫ জন। কোটা পূরণ হতে এখনো বাকি ৩৪ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৪৭৯ জন আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩ হাজার ৫৮৬ জন নিবন্ধন করেছেন।