চিকিৎসকরা বলেছিলেন তাদের বাঁচার সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ। তবে বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙে দিল এই যমজ। মাত্র ১৫২ দিনের মাথায় পৃথিবীর আলো দেখল তারা।
কানাডার অন্টারিওর বাসিন্দা শাকিনা রাজেন্দ্রাম গর্ভবতী হয়েছেন ২২ সপ্তাহও হয়নি। হঠাৎ করেই একদিন রাতে প্রচন্ড ব্যথা উঠল। কী ব্যাপার! চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে জানা গেল, এই ব্যথা প্রসবের ব্যথা। ২২ সপ্তাহের মাথায় প্রসব! শুনেই হতবাক হন হবু মা বাবা। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের কাছেও এই ঘটনা বিরলতম।
কিন্তু কোথায় হবে প্রসব? কোন হাসপাতালে এমন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রসবের ব্যবস্থা করানো যাবে? কানাডার কোনো হাসপাতালই রাজি হয়নি এই জটিল অস্ত্রপচার করতে! কারণ কোনো হাসপাতালেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেই! শুধু তাই নয়, ১৫২ দিনের মাথায় জন্মানো সদ্যজাতের বিশেষ যত্ন চাই! জরুরি অবস্থায় সবরকম যত্নের ব্যবস্থা চাই।
শেষ পর্যন্ত মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ব্যবস্থা হয় প্রসবের। তবে নিরাপদ প্রসব? নাহ্। কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি চিকিৎসকরা। শাকিনা রাজেন্দ্রামকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সদ্যজাত দুই শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা ‘শূন্য’ শতাংশ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কা নাকচ করে দুই একরত্তির জন্মদিন পালিত হলো ৪ মার্চ। বিশ্বের সব চেয়ে দ্রুত জন্মানো যমজ শিশু আদিয়া লাইলিন ও আদ্রিয়া লুকাহ নাদারাজা নাম তুলল গিনিস বুকে। জন্মদিনে গিনিস বুকের তরফে উপহার হিসেবে এল শিরোপাও। নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হলো দুই একরত্তির মিষ্টি ছবি। সেই উপলক্ষে ভাইরাল ভিডিয়োতে শাকিনা রাজেন্দ্রাম জানালেন তার একবছর আগের অভিজ্ঞতা।
সাধারণত ২৬৬ দিনের আগে কোনো শিশুর জন্ম হলে তা প্রিম্যাচিউর বার্থ হয়। প্রিম্যাচিউর শিশুর শরীরের গঠন ঠিকভাবে তৈরি হয় না। ফলে প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে পারে না সে। প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্য তাই অতিরিক্ত যত্ন জরুরি। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে অতিরিক্ত সাহায্য করতে হয়। জন্মের পর দুই যমজ শিশুর হাসপাতালেই কেটেছে ছয় মাস। শুধু পর্যবেক্ষণের জন্য নয়। এর মধ্যে একরত্তিদের শরীরে দেখা দিয়েছে মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ থেকে সেপসিস। এছাড়াও শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক না থাকা থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। তবে সেই সবের বিরুদ্ধে জোর লড়েছে ১৫২ দিনে জন্ম নেওয়া দুই শিশু। ছয় মাস পর প্রথম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় আদিয়া। তার এক সপ্তাহ পর তার ভাই আদ্রিয়া বাড়ি ফেরে।