দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিদ্রোহী প্রার্থী, বিতর্কিত ও নীতিবহির্ভূত করন্মকাণ্ডে দলের সুনাম নষ্ট করে বহিষ্কৃত ৬৪০ নেতাকে ক্ষমা করেছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে তাদের কাছে দলের দপ্তর থেকে তারা নিজেদের ক্ষমার চিঠি নিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখ থেকে তাদের শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন দলটি।
প্রথমে ক্ষমার চিঠি পান গাজীপুর সিটি করপোরেশন বরখাস্ত মেয়র ও গাজীপুর মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ২১ জানুয়ারি তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমার চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। এই ধারাবাহিকতায় একে একে বহিষ্কৃত নেতাদের ক্ষমার চিঠি দেওয়া শুরু করে দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪০ জন ক্ষমার চিঠি নিয়েছেন।
সর্বশেষ ক্ষমা চিঠি নিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান। গত রবিবার তিনি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ক্ষমার চিঠি গ্রহণ করেন।
জানা গেছে, যারাই ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন তাদের একই ফরম্যাট দলীয় শৃঙ্খলা যেন ভঙ্গ না করা হয় সেই শর্ত ক্ষমার চিঠি দেয়া হচ্ছে।
সৈয়দ কামরুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি ক্ষমার চিঠি নিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতে যেন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করি সেই মর্থে আওয়ামী লীগ আমাকে ক্ষমা করেছে।
ক্ষমার চিঠি গ্রহণকারী নেতাদের মধ্যে আছেন, আশুলিয়ার পাথলিয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, পিরোজপুরের নেছারাবাদ আ.লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব, মেহেরপুর জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আয়ুব হোসেন, বানিয়াচং উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন খান, উজিরপুর উপজেলা আ.লীগের লীগের সহ-সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা আ.লীগের জামাল উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী সৈয়দপুর বোতলা গাড়ী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরজ্জামান সরকার জুন, টাঙ্গাইলের কালাইহাতী উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনছার আলী, কালাইহাতী উপজেলার যুবলীগের সহসভাপতি মোহাম্মাদ সেলিম শিকদার, নারায়গঞ্জ বন্দর থানার মদনপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া, মুন্সিগগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা আ.লীগের সদস্য মো.মশিউর রহমান মামুন, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক, হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসানসহ ৬৪০ নেতা।
গত বছর ১৭ ডিসেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ক্ষমার আবেদন করা শতাধিক নেতাকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমা করেছেন। এর বাইরেও যারা আবেদন করবে তাদেরও ক্ষমা করা হবে।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদ সায়েম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন তাদেরকে ক্ষমা ক্ষমা করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।’
ক্ষমার চিঠিতে যা লেখা আছে
শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করা চিঠিতে প্রাপককে কেন বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, অভিযোগ স্বীকার করে আবেদনকারী আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
এমতাবস্থায়, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭ (২) ধারা মোতাবেক আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার প্রেরিত লিখিত আবেদন পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো। ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা সেই চিঠিতে সাক্ষর করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।