গুলিস্তানে বিস্ফোরণের ঘটনার একটু আগে রাস্তার ওপর একটি ভ্যান গাড়িতে বসেছিলেন রুবেল হোসেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ শুনতে পেয়ে চারদিক অন্ধকার দেখছিলেন তিনি। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে জীবন বাঁচাতে গুলিস্তানমুখী রাস্তার দিকে দৌড় দেন তিনি।
ধাতস্থ হয়ে কিছুক্ষণ পর আবার বিস্ফোরণস্থলের দিকে ফিরে আসেন রুবেল। ঘটনাস্থলে এসে দেখেন ভয়াবহ দৃশ্য। রাস্তায়, ফুটপাতে আর ভবনে পড়ে আছেন রক্তাক্ত বহু মানুষ। তাদের ওপর চাপা দিয়ে রয়েছে ভবনের ধ্বংসাবশেষ।
রুবেল সিদ্দিক বাজারের কাদের ম্যানশন মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড। এর একটি ভবনের পর ক্যাফে কুইন নামে ভবনে (১৮০/১) ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পুরো এলাকা ভূমিকম্পের মতো কাঁপতে থাকে। সামনে তাকিয়ে দেখি শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। তখন জীবন বাঁচাতে দৌড় দিই গুলিস্তানের দিকে। ফিরে এসে দেখি রাস্তায় ২৫-৩০ জন মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সিকিউরিটি গার্ড রুবেল
রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মার্কেটের পরে হলো ব্র্যাক ব্যাংক। আর ব্র্যাক ব্যাংকের পরে হলো ক্যাফে কুইন ভবনটি। ভবনটির নিচ তলায় আগে একটি ক্যাফে (রেস্তোরাঁ) ছিল যার নাম ছিল ক্যাফে কুইন। এরপর থেকে ভবনটির এই নাম হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুবেল বলেন, বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে মার্কেট থেকে বের হয়ে রাস্তায় একটি ভ্যান গাড়িতে বসি। ভ্যানটিতে বসার কিছুক্ষণ পরেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় এবং পুরো এলাকা ভূমিকম্পের মতো কাঁপতে থাকে। সামনে তাকিয়ে দেখি শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। তখন জীবন বাঁচাতে দৌড় দিই গুলিস্তানের দিকে। পরে ২-৩ মিনিট পর আবারও ক্যাফে কুইনের সামনে আসি। সামনে এসে দেখি রাস্তায় ২৫-৩০ জন মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিস্ফোরণের আগে রাস্তায় একটি বাস ছিল, অনেক সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান গাড়ি ও পথচারী ছিলেন। বিস্ফোরণে বাসের যাত্রীসহ সবাই আহত হন। যাদের মধ্যে অনেকে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন।
ক্যাফে কুইন ভবনটি সাত তলা। ১ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত স্যানেটারি মালামালের দোকান। আর ৪ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত আবাসিক।
তিনি জানান, ক্যাফে কুইন ভবনটি সাত তলা। ১ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত স্যানেটারি মালামালের দোকান। আর ৪ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত আবাসিক।
এদিকে, বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলের পাশে উপস্থিত ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার। তিনি জানান, বিস্ফোরণের আগে ক্যাফে কুইন ভবনটির সামনে চন্দ্রা থেকে সদরঘাটগামী সাভার পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। বিস্ফোরণের সময় বাসটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাসের প্রায় সব যাত্রী আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে ২৫০ গজ দূরে অবস্থিত গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার মার্কেটও বিস্ফোরণের সময় কেঁপে ওঠে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় মার্কেটটির মসজিদে আসরের নামাজের একামতরত অবস্থায় ছিলেন সিদ্দিক বাজারের জুতার দোকানি মাওলানা মুফতি জুনায়েদ আহমেদ।
বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিকট একটা শব্দ হয়, যা ছিল অস্বাভাবিক। তখন নামাজ শেষ করে সামনের দিকে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভিড়ের কারণে এগোতে পারিনি। তবে রাস্তায় দেখলাম একে একে রক্তাক্ত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সিদ্দিক বাজারের দোকানি মাওলানা মুফতি জুনায়েদ আহমেদ
তিনি বলেন, বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিকট একটা শব্দ হয়, যা ছিল অস্বাভাবিক। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার মার্কেটটিও কেঁপে ওঠে। নামাজ শেষ করে সামনের দিকে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মানুষের ভিড়ের কারণে তখন এগোতে পারিনি। তবে সেই সময় রাস্তায় দেখলাম একে একে রক্তাক্ত মানুষকে ভ্যান গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে একটি ৭ তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।