সিলেট স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়েও নিবন্ধন না থাকায় ট্রেনের টিকিট কাটতে পারছিলেন না যাত্রীদের অনেকে। পরে লাইন থেকে বের হয়ে স্টেশনের প্রবেশমুখে রেলওয়ের ‘হেল্প ডেস্কে’ গিয়ে সহযোগিতা নেন। সেখানে মুঠোফোনে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করে দিচ্ছিলেন কর্মীরা।
বুধবার (১ মার্চ) নতুন নিয়ম চালু হওয়ার প্রথম দিনে টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীরা কিছুটা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। পরে নতুন পদ্ধতিতে টিকিট কাটতে পেরে খুশি অনেকে।
টিকিট কাটতে আসা আবদুল আহাদ নামের এক যাত্রী বলেন, নতুন এ পদ্ধতি চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। প্রথম একটু না বুঝলেও পরে রেলকর্মীদের সাহায্যে টিকিট কাটতে পেরেছি। কিছুটা ভোগান্তি হলেও টিকিট কাটতে পারায় খুশি আমরা। নতুন নিয়ম পুরোপুরি অনুসরণ করলে ট্রেনের টিকিটে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমবে।
এ বিষয়ে সিলেট স্টেশন ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, টিকিট নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও সমাধান হয়েছে। আগে অনেকে স্টেশনে আসার পর টিকিট না পেয়ে কর্মকর্তাদের সন্দেহের চোখে দেখতেন। সরাসরি কেউ কিছু বলতে না পারলেও ভাবতেন, আমরাই এগুলো বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এখন যে যার টিকিট নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করে কাটতে পারছেন। এতে কালোবাজারে টিকিট কাটার প্রবণতা কমবে। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে ধারণাও পাল্টাবে।
স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেকে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সারিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও নিবন্ধন না থাকায় কাটতে পারছিলেন না। পরে লাইন থেকে বের হয়ে রেলওয়ের প্রবেশমুখে যান তিনি। সেখানে রেলস্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানা যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করে দিচ্ছিলেন। রেলকর্মীদের সহযোগিতায় নিবন্ধন করে আবার সারিতে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটেন।
এ বিষয়ে রথীন্দ্র দেবনাথ নামের এক যাত্রী বলেন, প্রথমে সারিতে দাঁড়িয়েও টিকিট কাটতে না পেরে ক্ষোভ হচ্ছিল। এখন টিকিট কাটতে পেরে ক্ষোভ কমেছে। সেই সঙ্গে নতুন এ পদ্ধতি যাত্রীদের টিকিট প্রাপ্তিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
টিকিট কাটতে আসা তোফায়েল আহমদ বলেন, সাধারণত পাঁচদিন আগের পর্যন্ত টিকিট অনলাইনে ও স্টেশনে এসেও পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সকাল সাড়ে আটটা কিংবা নয়টার মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। তবে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত টিকিট ছিল। নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করতে গিয়ে সামান্য ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এরপরও টিকিট পেয়ে খুশি।
স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানা বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টেশনের কয়েকজন কর্মী নিবন্ধন কার্যক্রম ও নতুন নিয়মে যাত্রীদের টিকিট কাটতে সহযোগিতা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা নিজেও।
অনেকের খুদে বার্তার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিলেও জন্ম তারিখে ভুল করায় ফিরতি খুদে বার্তায় নিবন্ধন হয়ে আসছে না। আবার অনেকে জন্মনিবন্ধন সনদের ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এতে সমস্যা হচ্ছে। এরপরও যাচাই করে সঠিক নিয়মে নিবন্ধন করে দিচ্ছেন তারা।
সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আগে সকাল ৮টার মধ্যে অনেকে টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলতেন। তবে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, যার জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকিট কাটা হবে, তিনি কেবল ভ্রমণ করতে পারবেন। সঙ্গে আরও তিনজনের জন্য টিকিট কাটতে পারবেন।
এর বাইরে অন্যের নিবন্ধন করা মুঠোফোন নম্বর দিয়ে ভ্রমণ করলে জরিমানা গুণতে হবে যাত্রীদের।