বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে যশোরের গদখালী ফুলের বাজার। কাঙ্খিত দাম পেয়ে ফুলচাষিদের মুখে যেন বসন্তের হাসি ফুটেছে। প্রায় তিন বছর পর মুখে হাসি দেখা গেল ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর চাষিদের।
রোববার একদিনেই গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে অন্তত কোটি টাকার গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে। চাহিদা থাকায় এদিন রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। দিবস দুটি ঘিরে এই অঞ্চলের চাষিরা গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
তারা বলছেন, এবার গোলাপের পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙেছে। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনীগন্ধা ফুলের দামও চড়া। এবার চড়ামূল্যে ফুল বিক্রি করতে পেরে গেল দুই বছরের করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে চাষিরা আশাবাদী।
রোববার ভোরে গদখালী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ বাইসাইকেলে কেউ মোটরসাইকেলে, কেউবা ভ্যানে করে নানা জাতের ফুল নিয়ে গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে হাজির হচ্ছেন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়। ৭টা নাগাদ জমে উঠে হাট।
উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা ও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারিরা ফুল কিনতে এ বাজারে আসেন। ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে গোটা প্রাঙ্গণ। ফুল কিনে ব্যবসায়ী বাসের ছাদে, ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু ও পিকআপে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। সকাল ১০টার মধ্যে হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। দিবস দুটির আগে রোববার ছিল সবচেয়ে বড় হাট। এই হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গোলাপ চাষি। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উৎসবে গদখালীর গোলাপ সারাদেশে সৌরভ ছড়াবে।
গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, একদিনেই গদখালী বাজার ও গোলাপের ক্ষেত থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। অন্তত ৫০০ ফুলচাষি গোলাপ ফুল নিয়ে আজ মোকামে আসেন।
সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষি আব্দুর কাদের বলেন, ৩০ বছর ধরে নানান জাতের ফুল চাষ করেছি। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছি গোলাপ। সেই প্রথম থেকেই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপ কোনো বার ১৫ টাকার বেশি পাইকারি দাম পায়নি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এই দামে সব কৃষকই লাভবান হবে।
গদখালি এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে রোববার এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া। ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি।
সালাম হোসেন নামে এক চাষি বলেন, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উপলক্ষে সবচেয়ে গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা বেশি। তরুণীরা চুলের খোপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। এ জন্যে জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের চাহিদাও রয়েছে।
স্থানীয় ফুলের ব্যাপারী আল আমিন বলেন, ২৫ টাকা দরে প্রতিটি গোলাপ (ক্যাপ ছাড়া) বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ক্যাপসহ গোলাপ বিক্রি করছেন ১৫ টাকা দরে। পাঁচদিন আগে গোলাপের পাইকারি দাম ছিল প্রায় অর্ধেক। আগামী আরও দুইদিন এমন চড়া দাম থাকবে।’ এছাড়া জারবেরা প্রতিটা ১০ থেকে ১৫, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বেচা-বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাদা ফুল প্রতি হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন ঘিরে গত পাঁচ দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত তিন কোটি টাকার গোলাপ ফুল সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রোববার অন্তত কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১০ লাখ গোলাপ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দিবস দুটি ঘিরে এই অঞ্চলের চাষিরা গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। রেকর্ড দামে গোলাপ বিক্রি করতে পেরে খুশি এই অঞ্চলের গোলাপ চাষিরা। বিগত কয়েকটি দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবে চাষিরা।