১৩ বছর বয়সী লামিয়া খাতুন। ১০ বছর আগে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। তখন সে ছোট ছিল। তারা উভয়েই এখন নতুন করে সংসার শুরু করেছে। মা নতুন সংসার ফরিদপুর আর বাবার নতুন সংসার চট্টগ্রামে। তারা কেউ তাকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়। থাকতেন নানীর বাসায়। কিন্তু ৫ মাস আগে তার নানি গোলাম কবির নামে একজনের বাসায় কাজের জন্য আমাকে রেখে যায়। সেখানে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তাইত গত সোমবার আশ্রয় চেয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে ওই কিশোরী।
কিশোরীর এমন আবেদনের পরে বিষয়টি ‘ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) সমাজসেবা জরুরি আলোচনা প্রয়োজন’ লেখে স্বাক্ষর করেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ। তিনি জানান, লামিয়া বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
কিশোরী দরখাস্তে লিখেছেন, তার নাম লামিয়া খাতুন। বাবা খোকন হোসেন ও রেখা বিবি। তাদের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা-মা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তখন সে ছোট ছিল। তারা উভয়েই এখন নতুন করে সংসার শুরু করেছে। মা নতুন সংসার ফরিদপুর আর বাবার নতুন সংসার চট্টগ্রামে। তারা কেউ আমাকে (লামিয়া) আশ্রয় দিতে রাজি নয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নানির বাসায় থাকছিলাম। কিন্তু ৫ মাস আগে আমার নানি গোলাম কবির নামে একজনের বাসায় কাজের জন্য আমাকে রেখে যায়। সেখানে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
আমাকে প্রায় সময় ইজ্জতহানীর চেষ্টা ও গায়ে হাত দেয়। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি অবস্থায় আছি। আমাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরপূর্বক চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় আমি গোলাম কবিরের বাড়িতে যেতে চাই না। যদি জোরপূর্বকভাবে নিয়ে যায় তাহলে আমার জীবননাশের হুমকি আছে। এমতাবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল হতে নিরাপদস্থানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আপনার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ বলেন, গোলাম কবির নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে থাকতো লামিয়া। গোলাম কবির নগরীর একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলে শুনেছি। তবে কোন কলেজের শিক্ষক সেটা জানা নেই আমার।
তিনি আরো বলেন, খবর পেয়ে রামেক হাসপাতালে ছুটে যাই। দেরি হলে হয়তো মেয়েটাকে তারা নিয়ে চলে যেতো। আমরা আসায় তারা মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। মেয়েটির কথার সত্যতা মিলেছে। মেয়েটিকে দেখে আমাদের মনে হয়েছে খুব ভয় পেয়েছে। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছে। রামেকে চিকিৎসা শেষে মেয়েটিকে আমাদের হেফাজতে নেবো। আর তার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।