লক্ষ্মীপুরের যুবক নাইমুর রশিদের প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন ফিলিপাইনের তরুণী যোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাই। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা শহরের ওয়েলকাম চাইনিজ রেস্তরাঁয় ঝমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
নাঈমুর রশিদ সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে ও মালেয়শিয়া প্রবাসী। যোয়ান ফিলিপাইনের বাসিন্দা এবং আরনেসতা লেগুমবাই ও ইমেলদা লেগুমবাই দম্পতির মেয়ে।
এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেহমান ছাড়াও স্থানীয়রা বিদেশি তরুণীকে দেখার জন্য ভিড় জমায়। গেল বছর ইন্দোনেশিয়ার দু’জন এবং নেপালের এক তরুণী লক্ষ্মীপুরের বধূ হয়েছেন। এর মধ্যে বছরের শেষ দিকে নেপালের তরুণী লক্ষ্মীপুরের পূত্রবধূ হন। এবার নতুন বছরের শুরুতে যোয়ানের আগমন বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়ে।
জানা গেছে, মালেয়শিয়ায় চাকরির সুবাধে যোয়ানের সঙ্গে নাঈমুরের পরিচয় হয়। তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এক সময় প্রেমে রূপ নেয়। আর প্রেমকে বিয়েতে পরিণত করতে ৩ জানুয়ারি যোয়ান ছুটে আসেন বাংলাদেশে। এরপর নিজ ধর্ম ত্যাগ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নতুন নাম দেন নাজিফা রশিদ আমিরা। বৃহস্পতিবার হামছাদী গ্রামে ঝমকালো আয়োজনে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয় তাদের।
নাঈমুরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ বছর আগে নাজিফা রশিদ আমিরার (যোয়ান) সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৮ বছরের প্রেমের পর এখন তারা বিয়ে করেছেন। বাকি জীবন তারা এক সঙ্গে মিলেমিশে কাটাবেন। যোয়ান তার বাবা-মায়ের সম্মতি নিয়েই লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। দু’জন ছুটিতে এসেছেন। খুব শিগগিরই তারা ফের মালেয়শিয়ায় চলে যাবেন।
নববধূ নাজিফা রশিদ আমিরার বলেন, মানুষজন তাকে দেখতে ছুটে আসছে। এটি সত্যিই বিস্ময়কর। অন্যদেশের নাগরিক বলেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটছে। তবে এখানকার মানুষ সবাই আন্তরিক। কিছুদিন থাকলে আমি নিজেও বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাব।
নাঈমুরের স্বজনরা জানান, বিয়েতে পরিবারের সম্মতি ছিল। এ জন্য ঝমকালো বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। যোয়ানকে সবারই পছন্দ হয়েছে। যোয়ান আসার পর থেকে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলছে। তার জন্য বাড়তি কোনো কিছু রান্না করতে হয় না। তাদের নিয়মিত খাবার খেতে যোয়ান স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করছে। বেশিরভাগ সময় তিনি ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলাতে খুব বেশি পারদর্শী নন। তাকে দেখতে আশপাশের লোকজন বাড়িতে আসছে। সবচেয়ে বেশি কৌতুহল দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়াকে। তিনি জানান, আমাদের দেশের যুবকরা মার্জিত আচরণের অধিকারী। তাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তার ধরন বিদেশীদের পছন্দ। এজন্যই বিদেশীরা আমাদের দেশের বধূ হতে ছুটে আসেন। ফিলিপাইনের তরুণী যোয়ান এখন লক্ষ্মীপুরের বধূ। তার সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগেছে। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
জেলার সদর (পশ্চিম) যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুবুল হক মাহবুব বলেন, নাঈমুর এবং যোয়ানের বিয়ের অনুষ্ঠানটি দারুণ আয়োজন ছিল। তাদের দু’জনের কথাবার্তা সুন্দর ও সাবলীল। গতবারের ৩ তরুণী আসার গল্প শুনলেও যেয়ে দেখা হয়নি। এবার দেখেছি। তাদের বিয়ের আয়োজনটি ইতিহাস হয়ে থাকবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৮ মার্চ প্রেমের টানে একই উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদের কাছে ছুটে আসেন ইন্দোনেশিয়ান তরুণী ফানিয়া আইও প্রেনিয়া। ফেসবুকের মাধ্যমে গড়ে ওঠা তাদের সম্পর্কটি বিয়ে পর্যন্ত রুপ নিয়েছে। এর ৭ মাসের মাথায় ৮ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ান আরও এক তরুণী সিতি রাহাইউ উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের উত্তর কেরোয়া গ্রামের মামুন হোসেনের কাছে ছুটে আসেন। মালয়েশিয়ায় চাকরির সুবাধে দুজনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা লক্ষ্মীপুর আদালতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বছরের শেষ দিকে রায়পুর পৌরসভার কাঞ্চনপুর এলাকার সাইপ্রাস প্রবাসী রাসেল হোসেনের কাছে ছুটে আসেন নেপালী তরুণী জ্যোতি। ২৭ ডিসেম্বর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দু’জনের সাইপ্রাসের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন তারা। সেখান থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।