দস্যুমুক্ত সুন্দরবন টিকিয়ে রাখতে ও মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে একটি বিশেষ আভিযানিক দল ‘এলিট টাইগার্স’ ট্রলারযোগে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে।
র্যাবের আভিযানিক এই দলটি সুন্দরবনের শরণখোলা, জয়মনি, বড়ইতলা, আন্ধারমনিক, মৃগামারি এলাকাসহ বনের শ্যালা নদীর বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালাবে। এছাড়া অভিযানের জন্য র্যাবের আরেকটি দলকে একটি স্পিডবোট ও বেঙ্গল টাইগার্স নামে অপর একটি ট্রলারসহ পূর্ণপ্রস্তুতি সহকারে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
সবশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর একটি নব্য বনদস্যু দল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বেড়ীর খাল ও হরমাল খাল এলাকা থেকে ১৫ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। অপহরণের ৬ দিন পর দস্যুদের কবল থেকে অপহৃত জেলেরা ছাড়া পায়। র্যাব ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় তারা বাড়িতে ফিরেছেন বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
র্যাব-৬ জানায়, সুন্দরবনে বিশেষ এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো- সাম্প্রতিক নব্য বনদস্যুদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা, দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য নৌ-পুলিশ, বন বিভাগ এবং কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয়সাধন, মাঠপর্যায়ে সুন্দরবনে অভিযান পরিচালনার স্থান রেকি করা, আত্মসমর্পণকারী বনদস্যুদের সঙ্গে সমন্বয় করা, সুন্দরবনে র্যাবের উপস্থিতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানান দেওয়া। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বনদস্যুদের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা, মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তাবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও নিরাপত্তার আশ্বস্ততা প্রদান এবং দরিদ্র মৎস্যজীবীদের শীতবস্ত্র বিতরণসহ মানবিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র্যাব অনেক ঘাম ঝরিয়েছে। যেকোনো মূল্যে সুন্দরবন যেন দুস্যুমুক্ত থাকে, দস্যুদের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হবে, সেই মূলমন্ত্র নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্দরবনের যে এলাকাতে দস্যু রয়েছে সেই এলাকা থেকে তাদের বিতাড়িত করা। প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে তাদের আটক করতে অভিযান চলবে। আর জেলেদের অভয় দেওয়া যে আমরা তাদের পাশে আছি। কোনো দুষ্কৃতকারী বা জলদস্যু যেন ক্ষতি করতে না পারে র্যাব সবসময় বলবৎ থাকবে।
সুন্দরবনে পূর্বের কোনো দস্যুবাহিনী নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন দুষ্ট লোক বা জেলেদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিংবা অপহরণ করে টাকা-পয়সা আদায়ের জন্য দস্যু হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এদেরকে নব্য জলদস্যু বলা যেতে পারে। আর পুরাতনদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। তাদের মামলা, পুনর্বাসনসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আমরাই দেখভাল করছি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, আপাতত ৩-৪ দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে আরও সময় বাড়িয়ে নেওয়া হবে। সুন্দরবন সার্বক্ষণিক আমাদের নজরদারির মধ্যে থাকবে।