নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। মানব ইতিহাসে সভ্য সমাজে বিয়ে ও পরিবারের গুরুত্ব কখনো কমেনি; বরং আধুনিক সমাজে অধঃপতন থেকে বেছে থাকতে, পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জোর দাবি উঠেছে।
বস্তুত, জীবনে বিয়ে-শাদির গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া (আ.)-কে তার জীবনসাথিরূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।
তবে সবারই মনে রাখা উচিত, নেককার ঈমানদার স্ত্রী সব সময় স্বামীর অনুগত ও উপকারি হয়। তারা দুনিয়ায় জীবনে স্বামীর জন্য যেমন উপকারি তেমনি পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের জন্যও হয় সহায়তাকারী। এ কারণেই বিয়ের সময় নারী নির্বাচনে সতর্ক থাকার উপদেশ দিয়েছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
বিয়ে আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি মানসিক প্রশান্তি ও বংশ বৃদ্ধির প্রধান উপকরণ। তবে বিয়ে যেহেতু শরিয়তের নিয়ম ও বিধি— তাই এক্ষেত্রে শরিয়তের নিয়ম অবশ্যই মান্য করতে হয়। শরিয়ত যেসব নিয়ম-বিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেগুলো অনুসরণ না করলে বিয়ে বৈধ হয় না।
যে ২৪ ধরনের নারীকে বিয়ে করা হারাম-
১. আপন মা, বাবা ও দাদা-নানার স্ত্রীরা এবং তাদের কামভাব নিয়ে স্পর্শকৃত নারী। এরূপ ঊর্ধ্বতন সব দাদা-নানার স্ত্রীরা।
২. মেয়ে এবং ছেলে ও মেয়ের ঘরের সব নাতনি।
৩. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ফুফু।
৪. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় খালা।
৫. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় বোন ও তাদের সন্তানাদি।
৬. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ভ্রাতৃকন্যা ও তাদের সন্তানাদি।
৭. দুধমাতা, তার মাতা, দাদি, নানি—এমনিভাবে ওপরের সব নারী।
৮. স্ত্রীর মেয়ে, যদি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হয়ে থাকে।
৯. পুত্রবধূ, আপন ছেলের হোক বা দুধছেলের হোক।
১০. আপন শাশুড়ি, দাদিশাশুড়ি, নানিশাশুড়ি এবং ওপরে যারা রয়েছে।
১১. দুই বোন একত্রীকরণ, এমনিভাবে ফুফু ও তার ভাতৃকন্যা, খালা ও তার ভাগ্নিকন্যাকে একসঙ্গে বিয়ের মধ্যে রাখা।
১২. উল্লিখিত রক্ত সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয়েছে, দুধ সম্পর্কের কারণেও তারা সবাই হারাম হয়।
১৩. যে মেয়ে অপরের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। এছাড়াও অন্য সব নারীকে বিয়ে করা হালাল। (দেখুন : সুরা নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)
বংশগত সম্পর্কে যারা হারাম
১৪. আপন জননীদের বিয়ে করা হারাম। এখানে দাদি, নানি সবার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য।
১৫. স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। এখানে পৌত্রী, প্রপৌত্রী, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী তাদেরও বিয়ে করা হারাম।
১৬. সহোদরা ভগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। এমনইভাবে বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী ভগ্নিকেও বিয়ে করা হারাম।
১৭. পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (ফুফুকে) বিয়ে করা হারাম।
১৮. আপন জননীর সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (খালা) বিবাহ করা হারাম।
১৯. ভ্রাতুষ্পুত্রীর সঙ্গেও বিয়ে হারাম, আপন হোক, বৈমাত্রীয় হোক।
২০. বোনের কন্যা, অর্থাৎ ভাগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। চাই সে বোন সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী যেকোনো ধরনের বোনই হোক না কেন, তাদের কন্যাদের বিবাহ করা ভাইয়ের জন্য বৈধ নয়।
বৈবাহিক সম্পর্কে যারা হারাম
২১. স্ত্রীদের মাতাগণ (শাশুড়ি) স্বামীর জন্য হারাম। এতে স্ত্রীদের নানি, দাদি সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য।
২২. নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহের পর সহবাস করার শর্তে ওই স্ত্রীর অন্য স্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ করা হারাম।
২৩. পুত্রবধূকে বিয়ে করা হারাম। পুত্র শব্দের ব্যাপকতার কারণে পৌত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে না।
২৪. দুই বোনকে বিবাহের মাধ্যমে একত্র করা অবৈধ, সহোদর বোন হোক কিংবা বৈমাত্রেয়ী বা বৈপিত্রেয়ী হোক, বংশের দিক থেকে হোক বা দুধের দিক থেকে হোক- এ বিধান সবার জন্য প্রযোজ্য। তবে এক বোনের চূড়ান্ত তালাক ও ইদ্দত পালনের পর কিংবা মৃত্যু হলে অন্য বোনকে বিবাহ করা জায়েজ।