ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানিতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন কমপক্ষে ৫০০ একর জমির ধানক্ষেত মরে গেছে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার সুপারি গাছও এখন মরে যাচ্ছে। গত ২৪ অক্টোবর রাতের জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানিতে এসব ক্ষেতের জমি সয়লাব হওয়ার ৪/৫ দিন পর এখন মাঠজুড়া ফসলের মরা দৃশ্য ভেসে উঠছে। মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বিস্তৃত সবুজের মাঠ এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
কক্সবাজারের কলাতলি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের পূর্বাংশে পাহাড়ের পাদদেশে উখিয়ার জালিয়া পালং ও টেকনাফের বাহারছড়া এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নে রয়েছে বিস্তৃত ফসলি জমি। এসব জমির ধান ক্ষেত, সুপারি বাগান এবং পানের বরজ ক্ষতির মুখে পড়ে সিত্রাংয়ের প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ক্ষেতের ধান ও সুপারি বাগান।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন শুক্রবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানান ‘আমার ইউনিয়নের এলাকার অন্তত ৫টি খাল ও ছড়া রয়েছে। এসব খাল ও ছড়া দিয়ে ঢুকে পড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে মাঠের ক্ষেত। কেবল আমার ইউনিয়নেই প্রায় ৩০০ একর জমির ধানক্ষেত মরে গেছে। ’ তিনি জানান, এবারের জলোচ্ছ্বাসের পানি ছিল লবণাক্ত। পানি নেমে যাওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই ধানক্ষেতসহ অন্যান্য গাছপালা মারা যাওয়া শুরু করে। এখন মাঠজুড়া ধানক্ষেত সবই লালচে রংয়ের মরা দৃশ্য ভেসে উঠেছে।
মনখালী খাল দিয়ে ঢুকে পড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বিরান হওয়া ধানক্ষেতের কৃষক দিল মোহাম্মদ বলেন ‘আমার দুই একর জমির ধানক্ষেতে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে সুপারি বাগানও। এখন সবই মরে যাওয়ায় আমি একদম পথে বসে গেছি। ’ মনখালী গ্রামের রাশেদুল হক নামের অপর একজন কৃষক বলেন, তার ২টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। তিন কানি জমির ধানক্ষেত ও সুপারি বাগানের কয়েক শ সুপারি গাছও মরে গেছে। মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বাসিন্দাদের প্রতিটি ঘরে ঘরেই এখন সিত্রাংয়ের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের আহাজারি চলছে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের মনখালী এলাকার কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিট সদস্য এ কে কাজল জানান, সাগরের জলোচ্ছ্বাসের পানি মেরিন ড্রাইভ উপচে পড়েনি। কেবল সংযোগ খাল এবং ছড়া দিয়েই এলাকায় ঢুকে বিলের ধানক্ষেত এবং সুপারি বাগান প্লাবিত করে দেয়। প্রথম দুয়েক দিন এরকম ক্ষতি চোখে পড়েনি। গত দুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে লবণাক্ত পানির ছোঁয়া যতদূর গেছে ততদূরের সমস্ত ক্ষেত-ফসল সবই মরে গেছে। তিনি জানান, জলোচ্ছ্বাসের সময় যদি বৃষ্টিপাত হতো তাহলে এরকম ক্ষতি হতো না।