ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল অতিক্রম করলেও বিভাগের সবগুলো নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়ে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। যা ৫৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল, ফসলি জমি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব কিছু। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা সদরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। তলিয়ে আছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বড় একটি অংশ। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার ছয় স্থানে দেড় হাজার মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, এখনো বিভাগের সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যেতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগতে পারে।
তিনি জানান, ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলায় মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি দুপুর ২টায় ১.৩৭ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে দৌলতখান উপজেলায় এই দুই নদীর পানি বিপৎসীমার ১.১৯ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় বিকেল ৪টায় তেঁতুলিয়া নদীর পানি ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৪টায় কীর্তনখোলা নদীর পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় বুড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। বিষখালী নদীর বরগুনা পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। একই নদীর পাথরঘাটা পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। বলেশ্বর নদীর পিরোজপুর পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কঁচা নদীর উমেদপুর পয়েন্টে দুপুরে পানি প্রবাহিত হয় ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আমতলীর বুড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, সিত্রাংয়ের প্রভাব, অমাবস্যার জোয়ার এবং ভারী বর্ষণের কারণে সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে তিনটি, বাকেরগঞ্জের নলুয়ায় একটি এবং উজিরপুরের গুঠিয়ায় দুটি বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৬০০ মিটারের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান, বরিশালে এক দিনে এত পরিমাণ বৃষ্টির রেকর্ড নিকট অতীতে নেই। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ডটি ছিল ১৯৬৭ সালের ১০ নভেম্বর। তার পরে চলতি বছরের সিত্রাংয়ের বৃষ্টিপাত রেকর্ড ভেঙেছে। ওইদিন বরিশালে ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।