কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা ‘সিত্রাং’

প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মঙ্গলবার বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে পারে সিত্রাং। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের ঘূর্ণিঝড় নজরদারি বিভাগের প্রধান আনন্দকুমার দাস। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা দিয়ে স্থলভাগে ঢুকতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব ও সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এরই মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্র প্রদেশসহ একাধিক রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বদিকে পৌঁছে যাবে নিম্নচাপটি। আগামীকালের মধ্যে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। মঙ্গলবারের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলে পৌঁছে যাবে। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।

অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিসের ঘূর্ণিঝড় নজরদারি বিভাগের প্রধান আনন্দকুমার দাসের কথায়, বিভিন্ন মডেল থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে বাংলাদেশ উপকূলে ল্যান্ডফল হতে পারে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের। পশ্চিমবঙ্গেও নিশ্চিতভাবে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে চলেছে বলে জানান তিনি।

‘সিত্রং’ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঘাত হানা তিনটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে অনুমান করা যেতে পারে।

২০২১ সালের ২৬ মে ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬৫ কিলোমিটার। যার প্রভাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। মৃত্যু হয় সাত জনের। তার আগে ২০২০ সালের ১৩ মে ভারত এবং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬০ কিলোমিটার। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১,৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছিল। একইসঙ্গে আম্ফানের কারণে ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় ১২৮ জনের মৃত্যু হয়।

এছাড়া ২০১৯ সালের ৩ মে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। যার প্রভাবে ৮১০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ এবং ভারতে ৮৯ জনের মৃত্যু হয়। এদিকে আন্দামান সাগরের চলমান ঘূর্ণাবর্তটি প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়ালেও এখনও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। তবে আবহাওয়াবিদদের মতে, এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।