‘এখন আমার দুই ছেলে নিয়ে কোথায় যাব’

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শান্তিরক্ষী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামে। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা ও স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ। মৃত্যুর আগে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তার। বলেছিলেন- ডিসেম্বর মাসে দেশে ফিরবেন। তার স্ত্রী কোনোভাবেই স্বামীর অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

বুধবার (৫ অক্টোবর) নিহত জসিমের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন এসে তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। জসিমের স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তান কান্নায় করছে। পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

নিহত মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়ার ছেলে। ২০০৯ সালে জসিম সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। ২০২১ সালে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যান।

নিহত জসিমের স্ত্রী শারমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে ফোন দিয়ে আমার খবর ও দুই ছেলের খবর নিয়েছে। বলেছে- ‘রাতে কড়া টহল আছে। পরের দিন কথা বলব।’ পরের দিন সকালে আমার কাছে সিলেট ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফোন আসে। আমার খোঁজখবর নেয়। এরপর যেন আমার ভেতরটা কেমন করে উঠল। পরে আমার জার কাছে থেকে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পাই। এখন আমার দুই ছেলে নিয়ে কোথায় যাব। আমার তো কিছু রইল না। স্বামীর বেতনের টাকা দিয়েই সংসার চলত আমাদের। আজ দেশের জন্য শহীদ হয়েছে আমার স্বামী। সরকারের কাছে আমার দাবি দুই সন্তানের ভবিষ্যতে ব্যবস্থা করে দেন। জীবিত স্বামীকে দেখতে পারলাম না, তার মরদেহ যেন দ্রুত দেশে আনা হয়।

নিহতের বাবা মো নূর মিয়া বলেন, আমার ছেলে শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে শহীদ হয়েছে। এখন তার স্ত্রী ও দুই ছেলের জন্য সরকার যেন পদক্ষেপ নেয়।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম ইফরান উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো ডুকমেন্ট পাইনি। মরদেহ আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন আহত হন।